রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাস্থ বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় বম পার্টি খ্যাত “কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট” (কেএনএফ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক সরল ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে “বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস)”র মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
আজ ২৭ জুন (সোমবার) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন পালন করেন। মানববন্ধনে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম,বাংলাদেশ'র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জু লাল ত্রিপুরা'র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিএসএফ'র সিনিয়র সহ-সভাপতি খঞ্জন জ্যোতি ত্রিপুরা।
এ সময় বক্তারা সরল ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নৃশংসভাবে হত্যা ও স্বশস্ত্র হামলার তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সরল ৪ জন ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে হত্যা ঘটনার ৫-৬ দিন অতিবাহিত হলেও, এখনও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিয়েছে এমন কোনকিছু চোখে পড়েনি এবং মৃতদের লাশ পর্যন্ত আজও উদ্ধার করা হয়নি,মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন। এ হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীদের দ্রুত সময়ে গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে জোর দাবি জানান বক্তারা। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা করা। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) আবু সাঈদ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিটিকেএস'র সভাপতি সুশীল জীবন ত্রিপুরা'র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'র জেলা শাখার উপ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ নুরুল আজম,বিটিকেএস 'র সহ-সভাপতি হিরন জয় ত্রিপুরা, বিটিকেএস'র সহ-সভাপতি বিবিষুৎ ত্রিপুরা সুকান্ত,বিটিকেএস'র সাংগঠনিক সম্পাদক তাপস কুমার ত্রিপুরা,গোলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান উল্লাস ত্রিপুরা,পেরাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা,বিটিকেএস সদর আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক মিহির কান্তি ত্রিপুরা,ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম,বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নয়ন ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক অঞ্জু লাল ত্রিপুরা,
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ জুন মঙ্গলবার আনুমানিক সন্ধ্যা ৬:০০ ঘটিকায় রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৪নং বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড, সাইজাম পাড়া গ্রামে এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে একই পরিবারের ৩ জনসহ মোট ৪ জন নিরীহ জুমচাষি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে হত্যাসহ ২জন শিশুকে গুরুতর আহত করে। এতে কয়েকজন পালিয়ে বেঁচে যান এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় খবর দিতে সক্ষম হন।
এ নৃশংস হামলায় নিহতরা হলেন- বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা(৫২), পীং-বাদলা ত্রিপুরা, সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা(২৩), পীং-বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা, বীর কুমার ত্রিপুরা(২১), পীং-বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরা । গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হওয়ার পরও সন্ত্রাসীরা বিচাই চন্দ্র ত্রিপুরাকে কুপিয়ে মাথা কেটে চলে যায়। অপরদিকে আহত শিশুরা হলেন- অনন্ত ত্রিপুরা(৪), পীং-নিহত সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা ও সুমনা ত্রিপুরা(১ বছর ৬ মাস), পীং-সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুন ঐ সময়ে সাইজাম পাড়া গ্রামের আদিবাসী ত্রিপুরা গ্রামবাসীরা যে যার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন ঠিক তখনই কেএনএফ সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল সেখানে এসে গ্রামবাসীদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট এ নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িতদের শাস্তিস্বরূপ আমাদের ৬টি দাবি উপস্থাপন করা হয়-
১) নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ন্যায় বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
২) আহতদের সুচিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করতে হবে।
৩) নিহত ও আহত পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূূরণ প্রদান করতে হবে৷
৪)নিহত ও আহত পরিবার এবং হামলায় আক্রান্ত গ্রামবাসীদের জান-মালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিহত ও আহত পরিবারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে৷
৫)কুকি-চিন-ন্যাশনাল ফ্রন্ট(কেএনএফ)'র সংগঠনের সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
৬) ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রশাসনকি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।