পাশ্ববর্তী দুই দেশের সীমান্ত হয়ে পার্বত্য রাঙামাটি হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে গরু-মহিষ পাচার করছে সংঘবদ্ধ পাচারকারিরা। পাহাড়ের দূর্গমতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাঙামাটির বিলাইছড়ি, জুড়াছড়ি ও বাঘাইছড়ির সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে এসব গরু-মহিষ কোনো রকম বাধা ছাড়াই অবাধে রাঙামাটিতে নিয়ে আসছে সিন্ডিকেট চক্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে এসব গরু-মহিষ দূর্গম এলাকাগুলোতে কিছুদিন রেখে সংশ্লিষ্ট্য প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সেখান থেকে রাঙামাটিতে নিয়ে আসছে গরু চোরাকারবারিরা।
এরপর রাঙামাটির ট্রাক টার্মিনাল ও কাপ্তাই নতুন বাজার থেকে ট্রাকের মাধ্যমে এসব ভিনদেশী গরু-মহিষ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। দেশীয় গরুর চেয়ে প্রতিটি গরু-মহিষ অন্তত ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কমমূল্যে পাওয়ায় এসব গরু-মহিষ অবৈধভাবে আনার ঝামেলাবিহীন রুট হিসেবে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, জুড়াছড়ি ও বিলাইছড়িকে বেছে নিয়েছে পাচারকারি সিন্ডিকেট চক্র। এতে করে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি স্থানীয় খামারিরা ব্যাপকহারে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
এদিকে, রাঙামাটির লংগদু উপজেলাধীন রাজনগর বিজিবি জোন তথা ৩৭ বিজিবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সোর্সের মাধ্যমে অবহিত হয়ে শনিবার রাত্রে চরুয়াখালী এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৩টি ভারতীয় গরু জব্দ করে। ৩৭ বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিযানের সময় চোরকারবারীরা বিজিবি’র উপস্থিতি টের পেয়ে গরু রেখে পালিয়ে যায়। আটককৃত ভারতীয় গরুগুলো শুল্ক কার্যালয়ে হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিজিবি রাজনগর জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল শাহ্ মোঃ শাকিল আলম, এসপিপি জানিয়েছেন দেশীয় গরুর খামারীদের রক্ষায় ভারতীয় গরু চোরাচালান বিরোধী বিজিবি’র অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত: চলতি বছরের ১৪ই জুলাই লংগদু উপজেলাধীন বৈরাগী বাজারের শীবেরআগা এলাকা থেকে অবৈধভাবে এনে মজুদ করা অবস্থায় ৫টি ভারতীয় মহিষ আটক করে ৩৭ বিজিবি কর্তৃপক্ষ। তারও আগে ১৩ই এপ্রিল চরুয়াখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভারত থেকে আনা ৮টি গরু জব্দ করে ৩৭ বিজিবি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাঙামাটি শহরের অন্তত ৮ জন ব্যবসায়ি ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার উপজাতীয় বাসিন্দাদের নিকট প্রায় ২০ কোটি টাকার দাদন দিয়ে ভারত ও মায়ানমার থেকে গরু-মহিষ পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে রাঙামাটিতে আনার কাজে ব্যবহার করছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকারকে রাজস্ব নাদিয়ে অবৈধ গরু-মহিষের কোটি কোটি টাকার ব্যবসার সাথে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সীমান্তে সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে গরু-মহিষের ছবি দেখিয়ে মূল্য নির্ধারন করে রাঙামাটিতে নিয়ে আসার অর্ডার কনফার্ম করা হয়।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বিগত এক বছর ধরে রাঙামাটির পাশ^বর্তী রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ি ভারতীয় গরু-মহিষ বিলাইছড়ি সীমান্ত দিয়ে কাপ্তাই নতুনবাজার হয়ে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন খামার ও চট্টগ্রামে ট্রাকে করে পাচার করে। চলতি বছরের ২৬শে মে এই চক্রের অন্যতম একজন ২০ লাখ ভারতীয় মুদ্রাসহ বিলাইছড়িতে আটক হয়।
অপরদিকে রাঙামাটির গরু চোরাকারবারিরা জেলা জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ির ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো দিয়ে ভারতীয় গরু-মহিষ রাঙামাটিতে নিয়ে আসে বলে বিশ্বস্থ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এবং কয়েকটি খাতে উৎকোচ প্রদান করে রাঙামাটির ট্রাক টার্মিনাল দিয়েও দিনে-দুপুরে এবং রাত্রের বেলায় ট্রাক ভর্তি করে পাচার করা হয়েছে কয়েকশতাধিক ভারতীয় গরু।