দলবদ্ধ সহিংসতা ও গণপিটুনিতে হত্যা নিয়ে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশের উদ্বেগ
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 07-10-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দলবদ্ধ সহিংসতা ও গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ)। গতকাল রোববার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেছেন জেএমবিএফের প্রধান সমন্বয়কারী ও নির্বাহী সদস্য মোসা জান্নাতুল ফেরদৌস।

এতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ধরনের দলবদ্ধ সহিংসতা (মব ভায়োলেন্স) ও গণপিটুনিতে হত্যার (লিঞ্চিং) ঘটনা বন্ধে তাৎক্ষণিক ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে আহ্বান জানিয়েছে জেএমবিএফ। তারা একই সঙ্গে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা যেসব ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোরও তদন্ত চেয়েছে। ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটির দাবি, ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে একটি স্বচ্ছ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জেএমবিএফের বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক পালাবদলের পর দলবদ্ধ হামলা ও গণপিটুনিতে হত্যার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এই ধরনের ৫৩টি ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩টি দলবদ্ধ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ২২ জন।

জেএমবিএফের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ফরাসি মানবাধিকারকর্মী রবার্ট সাইমন বাংলাদেশের দলবদ্ধ হামলা ও গণপিটুনিতে হত্যা প্রসঙ্গে বলেন, ‘অরাজকতার এই প্রাদুর্ভাব মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের মূলনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। হতাশা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সংগঠিত গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মৌলিক মানবিক মর্যাদার জন্য বড় হুমকি।’

জেএমবিএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আইনজীবী শাহানুর ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ দলবদ্ধ হামলার বাড়ন্ত গতি একটি ব্যর্থ সিস্টেমের সরাসরি ফলাফল। সঠিক প্রতিক্রিয়া ও আইনের শাসনের পরিবর্তে দলবদ্ধ হামলা ঘটতে দিলে কোনো সমাজ নিজেকে ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক বলে দাবি করতে পারে না। আরও রক্তপাত বন্ধ করতে তাৎক্ষণিক ও সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা মধ্যবর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।’

 

জেএমবিএফ বিশ্বাস করে, এসব সমস্যাজনক প্রবণতা শুধু শাসনের ব্যর্থতার ইঙ্গিত নয়, বরং তা ন্যায়বিচার দিতে পারা নিয়ে রাষ্ট্রের সক্ষমতার প্রতি জনগণের বিশ্বাসে গুরুতর ক্ষয়ের নির্দেশ। সব নাগরিককে রক্ষা করা, জনগণের বিশ্বাস ফেরানো এবং কোনো ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে না, এসব নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায়িত্ব। দলবদ্ধ হামলার দ্বারা ন্যায়বিচার করা যায় না এবং এমনটি করা উচিতও নয়।

জেএমবিএফের বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সম্প্রতি গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা বাড়ার বিষয়টি আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত শক্তিশালী করার ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। একটি নাগরিক সমাজে সহিংসতা ও অরাজকতার কোনো স্থান নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনের শাসনের সুরক্ষা দিতে হবে। সংহতি জানিয়ে আমরা এই সব ভয়ংকর হামলার ভুক্তভোগীদের পাশে আছি। আমরা অবিলম্বে ন্যায়বিচার ও দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

এসব সহিংসতা রোধে দ্রুত কাজ করতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছে জেএমবিএফ। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা এসব জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানাই এবং গণপিটুনিতে হত্যা বন্ধে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।’

বিবৃতির শেষে বলা হয়, জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (জেএমবিএফ) ভুক্তভোগীদের অধিকার, সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া আরও বলা হয়, ‘আমরা এমন এক বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাব, যেখানে সহিংসতা নয়, আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

শেয়ার করুন