রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে জন্মে উলফুল। প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে তা। এরপর এ উলফুল দিয়ে ফুল ঝাড়ু তৈরি করে আনেক বাঙ্গালী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবার। এ ফুল ঝাড়ু বিক্রি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছে অনেকে। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারী সাপ্তাহিক বাজারের দিনে ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ফুল ঝাড়ূ। পাহাড়ের উলফুল ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহার হয়। রাজমিস্ত্রির কাজে ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহার করায় দেশব্যাপী এর চাহিদাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ের উলফুল ঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সবখানে।
বন বিভাগের মতে, চাহিদা থাকায় রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার ন্যায় রাজস্থলী উপজেলার রাজস্থলী বাজার, ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজার ও বাঙ্গালহালিয়া বাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে পাহাড়ের উলফুল সংগ্রহ করে পাহাড়ি-বাঙালি নিম্ন আয়ের নারী-পুরুষেরা। পাহাড়ের বন-জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা উলফুলের মোছা বানিয়ে ঝাড়– হিসেবে প্রতিদিন স্থানীয় বাজারগুলোয় বিক্রি করে শ্রমজীবী মানুষেরা। পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারের নারীরাও পাহাড়ে জুমচাষ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুলঝাড়– সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারগুলোয় বিক্রি করে নিয়মিত। স্থানীয় পাহাড়ি নারীরা সংসারে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে একে বেছে নিয়েছে।
রাজস্থলী সড়কের অসুইউ মারমা বলেন পাহাড় থেকে ফুলঝাড়ূ– কেটে মোছা তৈরি করে রাস্তার পাশের বাজারে বিক্রি করি। ফুলের ৩০ থেকে ৪০টি কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয় একেকটি ফুলঝাড় মোছা। প্রতিটি মোছা ৬০- থেকে ৭০ টাকায় বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। পাহাড় থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি ঝাড়ুর মোছা সংগ্রহ করা সম্ভব। এগুলো বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় হয় আমাদের। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালিদের কাছ থেকে পাইকারি দামে উলফুল কিনে রোদে শুকিয়ে মোছা বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে কয়েকজন ব্যবসায়ী। বাজারে প্রতি হাজার ফুলঝাড়ুর কঞ্চি ৮শ থেকে ১হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমজীবী মানুষ পাহাড় থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ফুল ঝাড়ুর কঞ্চি কেটে সংগ্রহ করতে পারে। যা দিয়ে প্রায় ৮শ থেকে এক হাজার টাকা আয় করা যায়। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি ফুলঝাড়ুর মোছা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ সেলিম বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের মানুষের কাছ থেকে পাইকারি দামে ফুল ঝাড়ু কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামে বিক্রি করি। ২০১৯ সালে প্রথম ঝাড়ু ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার অধীনে ১০ থেকে জন নারী-পুরুষ ফুল ঝাড়ু রোদে শুকানো ও মোছা বানানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ফুলঝাড়ু সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। শুক্রবার বাজার থেকে এক গাড়ি দারুন ফুল ক্রয় করেছেন। এতে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার ঝাড়– ফুল কিনেছেন।
ঝাড়ু ব্যবসায়ী আহমেদ সফি বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি কাঁচা ফুলঝাড়র মোছা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনি। পরে রোদে শুকিয়ে শ্রমিক দিয়ে নতুনভাবে ঝাড়ুর মোছা বানিয়ে গাড়িতে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করি। এ ঝাড়ু ব্যবসা করে তার মতো আরও অনেকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। ফুল ঝাড়– ব্যবসায়ী মোঃ আসরাফুল ইসলাম বলেন শুক্রবার সাপ্তাহিক বাজারকে কেন্দ্র করে দুই দিনে প্রায় সাড়ে ৪ হতে ৫কোটি টাকার ফুল ঝাড়–র বেচা কেনা হয়েছে বলে জানান। এতে করে ক্রেতা ও বিক্রেতারা খুব খুশি।
ঝাড়ু শ্রমিক আনারুল ইসলাম, আক্তার, আয়সা খাতুনসহ কয়েকজন বলেন, পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা ফুল ঝাড়ুর মোছা তৈরি করি আমরা। মোছা বানিয়ে দিনে পাঁচ শত থেকে ছয় শত টাকা পান তারা। এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলে।
রাজস্থলী সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো শাহীনুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাকে জন্মানো উলফুল ফুলঝাড়– হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে এ ক্ষুদ্র কুটিরশিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ফুলঝাড়ু বিক্রি করে রাজস্থলীতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ। এতে সরকারি ভাবে রাজস্ব আদায় ও হচ্ছে বলে জানান।