গত বছরের ৯ জুলাই গৌতম গম্ভীরকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। বোর্ডের সঙ্গে তাঁর চুক্তি ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। রোহিত–কোহলিদের কোচ হিসেবে গম্ভীরের অর্জনের খাতায় যেমন সাফল্য আছে, আছে ব্যর্থতাও।
তবে সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের শিরোপা জয় গম্ভীরের ব্যর্থতাকে প্রায় আড়াল করে দিয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র আট মাসের মধ্যে দেশকে বৈশ্বিক শিরোপা এনে দেওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়!
৪৩ বছর বয়সী গম্ভীর ভারতের খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন ২০০৭ টি–টোয়েন্টি ও ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এবার কোচ হিসেবে জিতলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
খেলোয়াড়–কোচ উভয় ভূমিকায় বৈশ্বিক ট্রফি জেতার কীর্তি খুব কম মানুষেরই আছে। ভারতকে নতুন সাফল্য এনে দেওয়ার পর ক্রিকেট মহলে আবারও আলোচনায় গৌতম গম্ভীর, বিশেষ করে তাঁর বেতন এবং বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে পাওয়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়ে সম্প্রতি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে ভারতইনস্টাগ্রাম
ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ মেটানোর চেষ্টা করেছে ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাসেনড্যান্টস। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গম্ভীরের আনুমানিক বার্ষিক বেতন ১৪ কোটি রুপির বেশি, যা তাঁকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া কোচদের একজন করে তুলেছে। গম্ভীরের আগে ভারতের প্রধান কোচ ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। দ্রাবিড় বছরে পেতেন ১২ কোটি রুপি।
মোটা অঙ্কের বেতনের পাশাপাশি বিদেশ সফরে দৈনিক ২১ হাজার রুপি ভাতা হিসেবে পাচ্ছেন গম্ভীর। উড়োজাহাজে বিজনেস ক্লাসের টিকিট, বিলাসবহুল হোটেলে রাখার ব্যবস্থা, লন্ড্রি ব্যয়ও বহন করে বিসিসিআই। অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা তো আছেই।
এই সুযোগ-সুবিধাগুলো বিসিসিআইয়ের কৌশলের অংশ। এর মাধ্যমে তারা উঁচু মাপের কোচিং প্রতিভাদের আকৃষ্ট করে এবং ধরে রাখে। তা ছাড়া বোর্ড মনে করে, গম্ভীর ও তাঁর সহকারীদের এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিলে তাঁরা শুধু দলের পারফরম্যান্সের ওপরই মনোনিবেশ করবেন।
একাধিক সূত্র অ্যাসেনড্যান্টসকে জানিয়েছে, গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে বিসিসিআইয়ের চুক্তিপত্রে পারফরম্যান্সভিত্তিক বোনাসের বিষয়ও উল্লেখ আছে। বোনাসগুলো ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে দলের সাফল্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
গৌতম গম্ভীরকে সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা দিয়ে থাকে বিসিসিআইইনস্টাগ্রাম
চুক্তিপত্রে লেখা আছে, গম্ভীরের অধীন ভারত যদি এই টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি জিততে পারে, তাহলে বড় অঙ্কের বোনাস পাবেন। ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে যাওয়ায় বিসিসিআই শিগগিরই গম্ভীরসহ তাঁর সাপোর্ট স্টাফকে বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা গম্ভীরের কৌশলগত দক্ষতার প্রশংসা করেছেন, বিশেষ করে তরুণ প্রতিভাদের গড়ে তোলা এবং বড় ম্যাচে খেলোয়াড়দের স্নায়ুচাপ ধরে রাখা। কৌশলগত দক্ষতার উদাহরণ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কথাই বলা যায়।
ভারত নিজেদের সব ম্যাচ খেলেছে দুবাইয়ে এবং বেশির ভাগ ম্যাচ হয়েছে ব্যবহৃত উইকেটে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর কিছুদিন আগে দুবাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি–টোয়েন্টিরও অনেক ম্যাচ হয়েছে।
এ কারণে গম্ভীরের মনে হয়েছিল, দিন যতই গড়াবে, সেখানকার পিচ মন্থর হবে এবং স্পিন ভালো ধরবে। তাই প্রাথমিক দল থেকে ব্যাটসম্যান যশস্বী জয়সোয়ালকে বাদ দিয়ে রহস্যময় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে চূড়ান্ত স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই বরুণই টুর্নামেন্টের শেষ ভাগে গম্ভীরের তুরুপের তাস হয়ে ওঠেন এবং ভারতকে শিরোপা জেতাতে বড় অবদান রাখেন।
ভারতের খেলোয়াড়েরা আগামী দুই মাস আইপিএলে ডুবে থাকবেন। এরপর গম্ভীরের বড় অ্যাসাইনমেন্ট ইংল্যান্ড সফর। জুন থেকে আগস্টের মধ্যে সেখানে পাঁচটি টেস্ট খেলবে ভারত জাতীয় দল। এর আগে ‘এ’ দলও ইংল্যান্ড সফরে যাবে।
গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তি আছে বিসিসিআইয়েরআইসিসি
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় দলের জন্য শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি করতে ‘এ’ দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে যাবেন গম্ভীর। অতীতে ভারতের কোনো কোচকে এ ধরনের পরিকল্পনা করতে দেখা যায়নি।