বান্দরবানের অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রশিক্ষন কমান্ডার দিদার হোসেনসহ ৯ জঙ্গিকে আটক করেছে র্যাব। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
রবিবার (১২ মার্চ) ভোর রাতে সদর উপজেলার টংকাবতী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। অভিযানে টের পেয়ে আরো ৬জন জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সোমবার (১৩ মার্চ ) সকালে বান্দরবানের র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, পার্বত্য অঞ্জলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার, কুমিল্লা সদরের দিদার হোসেন মাসুম ওরফে চাম্পাই (২৫), নারায়ণগঞ্জ সদরের আল আমিন সর্দার ওরফে আব্দুল্লাহ বাহাই (২৯), ঢাকা কামরাঙ্গী চরের সাইনুন ওরফে হুজাইফা রায়হান (২১), সিলেট বিরানী বাজারের তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাবেল (১৯), সিলেট শাহপরান এলাকার লোকমান মিয়া (২৩), কুমিল্লা লাকসাস এলাকার ইমরান হোসেন ওরফে শান্ত (৩৫), ঝিনাইদহ কোর্টচাদপুর এলাকার আমির হোসেন (২১), বরিশাল সদরের আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮), ময়মনসিংহ ফুলপুরের শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই (২৪)।
এর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফলে সব মিলিয়ে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ সদস্যকে গ্রেফতার করলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের পাহাড়ের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন চম্পাইকে ধরার জন্য র্যাব নানা তৎপরতা চালিয়েছে। এরা পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফের ছত্রছায়ায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে বিভিন্ন গোপন আস্তানায়। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের অন্যতম ছিল এই চম্পাই। রবিবার চম্পাইসহ অপর ৯ জন সদস্য সমতলে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে র্যাবের হাতে। এ নিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের ৩৭ জন সদস্যকে পাহাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। এরা বিভিন্ন সময়ে কথিত হিজরতের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাহাড়ে এসে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
প্রেসব্রিফিং এ র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে, আর তারই ধারবাহিকতায় নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’র বেশ কয়েকজন সদস্য পাহাড়ে অবস্থান করে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন- এমন খবর পেয়ে র্যাব গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বান্দরবানে সন্ত্রাস নিমূলে কাজ করে যাচ্ছে।
এসময় তিনি পার্বত্য এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’র ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যদের নিমূল না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে বলেও সাংবাদিকদের জানান।
এতদিন জঙ্গীরা তাদের অবস্থান বর্তমানে সমতলে অর্থাৎ দিনদিন শহরকেন্দ্রিক হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, যৌথবাহিনী অভিযান কারণে তারা মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিরাপদ মনে করছে না। সেজন্য জঙ্গিরা সমতলে আত্মগোপনে অগ্রসর হচ্ছে।
র্যাবের অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের কাজ থেকে যে অস্তগুলো পেয়েছি সেগুলি মূলত উদ্ধার করেছি। আমাদের যা তথ্য রয়েছে বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন তাদের কাছে ভারী অস্ত্র রয়েছে।
এক প্রম্নের জবাবে কেএনএফ বর্তমান তাদের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে ১৭জন পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফকে আইনের আওতা আনতে পেরেছি। গতকাল অভিযানে জঙ্গিদের সাথে পথপ্রদর্শক আর আশ্রয় প্রদানকারী হিসেবে কেএনএফ সদস্য থাকার একটি সম্ভাবনা এরকম সংবাদ আমাদের কাছে রয়েছে।
অভিযানে পরিচালনা করতে গিয়ে সেনা সদস্যদের সাথে গুলাগুলি হয়েছে আজকের অভিযানে সাথে সম্পৃক্ত আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চলমান জঙ্গি বিরোধী অভিযানে তারই অংশ হিসেবে গতকাল অভিযান পরিচালনা করেছি। ইতি সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান র্যাবের এর কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ২০২০সাল থেকে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি বম সম্প্রদায়ের কিছু বিপথগামী যুবক কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তুলে আর পরবর্তীতে তাদের অর্থের বিনিময় মাধ্যমে আশ্রয়ে শসস্ত্র প্রশিক্ষণে যুক্ত হয় সমতল থেকে আসা নব্য জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার বেশ কিছু সদস্য। এদিকে তাদের নির্মূলে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনীর বাহিনীর সদস্যরা।