বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে বরই বাগান করে ব্যাঁপক সাফল্য পাচ্ছে চাষীরা। পাহাড়ে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে বিভিন্ন জাতের বরই। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বরই চাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠছে পাহাড়ের জুমিয়া চাষীরা, বর্তমানে বান্দরবানের এই বরই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের নানান প্রান্তে।
বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ে এখন দেখা মেলছে সুমিষ্ট মৌসুমী ফল বরই। বান্দরবান জেলা সদরে চিম্বুক, ওয়াইজংশন, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম ও লামা উপজেলায় একসময় যে পাহাড়গুলো অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকতো এখন সেই পাহাড় জুড়ে দেখা মিলছে বিভিন্ন জাতের বরই এর ফলন। তুলনামুলক কম পরিশ্রমে অধিক ফলন আর বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ায় চাষীরা এখন পাহাড়ের বিভিন্নস্থানে আবাদ করছে আপেল কুল, কাশমিরী কুল, বল সুন্দরীকুল সহ বিভিন্ন জাতের বরই।
বান্দরবানের টংকাবতী ৫নং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের রামরি পাড়ার কুল চাষী ইয়াংঙান ম্রো জানান,৭ একর জমিতে বরই বাগান করেছি, বড়ই বাগান করে বেশ লাভবান হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমার বাগানে ৫শত বরই গাছ রয়েছে, ২১সালের প্রায় ১১মন বরই বিক্রি করেছি বাগান থেকে আবার ২২ সালে প্রায় ১৮ মন বরই বিক্রি করেছি। চাষী ইয়াংঙান ম্রো আরো বলেন, কৃষি বিভাগ আমাদের যতেষ্ট সহযোগিতা করে আর আমরা অনেক পরামর্শ পাই কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
একই এলাকার বরই চাষী তন পাউ ম্রো বলেন, পাহাড়ে বরই চাষ খুব ভালো ফলন দেয়, সমতলের চাইতে পাহাড়ের বুকে বরই ফলন ভালো হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার বাগানে আপেল কুল, বলসুন্দরী, থাইকুল সহ বিভিন্ন উন্নত জাতের বরই গাছ রয়েছে। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বরই পাকতে শুরু করে, এই বরই আকারে বড় ও স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় পাইকাররা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যায় বিভিন্ন জেলায়।
এদিকে গতবছরের মত এবারেও বান্দরবানে হয়েছে ব্যাঁপক বরইয়ের আবাদ, ব্যবসায়ীরাও বিক্রি করে পাচ্ছে ভালো দাম।
বান্দরবান বাজারের বরই বিক্রেতা মো.শাহ আলম বলেন, বান্দরবানের বরই খুবই সুস্বাদু। বিক্রেতা শাহ আলম আরো বলেন, বান্দরবানের খুব কম সময়ের মধ্যে গাছে বরই দেখা যায় আর চাষীরা বাজারে নিয়ে আসে আর আমরা তাদের কাছ থেকে কিনে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থানে পাইকারী সরবরাহ করে থাকি।
বরই বিক্রেতা মো.শাহ আলম আরো বলেন, আপেল কুল খুচরা প্রতি কেজি ১০০-১৪০টাকা, বলসুন্দরী ৮০-১২০ টাকা দামে বিক্রি করি।
বান্দরবানের আবহাওয়া ও মাটি সকল ধরণের ফসলের চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বরই চাষে পাহাড়ে বেশ ফলনও পাচ্ছে চাষীরা। বিশেষ করে বান্দরবানের মাটি এসেটিক জাতীয় হওয়ায় বিভিন্ন ফল চাষে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। বরই চাষে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ, চারা ও সার প্রদানসহ বরই বিক্রিতে সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১-২২অর্থ বছরে বান্দরবানে ১৩০০হেক্টর জমিতে ৭.৪৬ মেট্রিক টন কুল উৎপাদন হয়। আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৫০০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে যার বিপরীতে ১২ মেট্রিক টন বরই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বান্দরবান এর উপ-পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, কম খরচ ও দ্রুত সময়ে ফলন বেশি পাওয়ায় বান্দরবানে প্রতিবছরই বরই বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে।