বান্দরবানে তিন উৎসবকে সামনে রেখেও ব্যবসায় ভাটা
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 09-04-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

কেএনএফ এর হামলা, অস্ত্র লুট ও অপহরণের পর ফের হামলা আশঙ্খা, নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযান এর কারনে পাহাড়ে সন্ধ্যা নামলেই শুনশান নিরবতা নেমে আসছে। বিশেষ করে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সন্ধ্যার পর মানুষে দেখা মেলা ভার। ফলে সামনে তিনটি উৎসব থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে আসছে অচলাবস্থা।

জানা যায়, গত ২ এপ্রিল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকে শতাধিক কেএনএফ সদস্য অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার সদস্যদের জিম্মি করে ১৪টি অস্ত্র লুট ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে। এ ঘটনার সতেরো ঘন্টার মধ্যে ৩ এপ্রিল থানচিতে গুলিবর্ষণ এবং কৃষি ও সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা লুট ও ৪ এপ্রিল ফের থানচির সোনালী ব্যাংক ও বাজারে আক্রমন করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে উপজেলার বাজারগুলোতে মানুষের আনাগোনা নেই।

থানচি বাজার কমিটির সভাপতি কামলাই ম্রো জানান, পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক হলেও বাজারে মানুষের আনাগোনা একটু বেড়েছে। তবে, তুলনামূলক ভাবে উৎসবকে সামনে রেখে বাজারে মানুষজন কম আসছে।

রুমা ও থানচির তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি এবং পরে থানচিতে গোলাগুলির পর পুরো জেলায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে দিন কাটছে জেলার মানুষের। জেলা সদর থেকে উন্নয়ন কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা উপজেলার দূর্গম এলাকায় কাজ করতে যাচ্ছেনা, ফলে থমকে গেছে উন্নয়ন কাজ। অন্যদিকে পাহাড়ের কৃষিপণ্য কিনতে ব্যবসায়িরা উপজেলাগুলোতে না যাওয়ার কারনে নষ্ট হচ্ছে কৃষিপণ্য।

রুমা বাজার কমিটির সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া বলেন, সাধারণ মানুষরা এখনো আতঙ্কে আছে। বাজারে মানুষ খুব কম আসার কারনে বেচাকেনাও হচ্ছে না।

সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ, বাংলা নববর্ষ ও বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের বিসু , বিজু ও সাংগ্রাই উৎসবকে সামনে রেখে বিগতবছরগুলোতে হাজার হাজার পর্যটক জেলায় ভ্রমনে আসলেও এবার হোটেল-মোটেলগুলোতে হোটেলের সিট বুকিং নেই বললেই চলে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পুরোদমে বেচাকেনা হওয়ার কথা থাকলেও পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারনে তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

আলীকদম বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কায়সার উদ্দিন বাপ্পি জানান, রুমা, থানচি ঘটনার পর আলীকদমের ২৬ কিলোর ঘটনা, কলাঝিরি এলাকায় অস্ত্রধারী দেখা গেছে বলে মানুষ আতঙ্কে আছে,তাই বাজারে কেনাকাটা করতে মানুষ আসছে কম।

রুমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শৈমং মার্মা শৈবং বলেন, ঘটনার পর থেকে মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। বাজারে লোকসমাগম খুব কম, কেউ প্রয়োজনের বাইরে বের হচ্ছে না।

সূত্রে জানা যায়, ‘কুকি-চিন রাজ্য’ নামে একটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে পাহাড়ের ৯টি উপজেলা তাদের পূর্ব-পুরুষদের আদিম নিবাস, দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে তাদের ভূমি দখল করে নেয় এবং কোটাসহ সরকারি বিভিন্ন সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। জেএসএস’সহ অন্য সংগঠন গুলো তাদের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে, এসব থেকে মুক্তি পেতে এই সংগঠন এর সৃষ্টি। সংগঠনটি ২০১৭ সালে কেএনভি নামে সশস্ত্র সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে শতাধিক সক্রিয় সদস্য কাচিন, কারেন প্রদেশ এবং মনিপুর রাজ্যে প্রশিক্ষণে পাঠায়। ২০১৯ সালে কমান্ডো প্রশিক্ষণ শেষে শসস্ত্র অবস্থায় ফিরে আসে। দেশের রুমা সীমান্ত ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের জাম্পুই পাহাড়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত এ সংগঠনের শসস্ত্র ও নিরস্ত্র মিলিয়ে মোট ৬শ এর বেশি সদস্য আছে। বর্তমানে তারা বান্দরবান ও রাঙামাটির অন্তত ৫টি উপজেলায় ঘাঁটি গেড়ে এসবিবিএল, একে ৪৭, এসএমজি, পিস্তল, নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরী ল্যান্ড মাইন্ড ব্যবহার করে অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়িত।

এই ব্যাপারে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, পাহাড়ের তিন উৎসবকে সামনে রেখে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার কোন আশংকা নেই।

প্রসঙ্গত,৮ এপ্রিল সোমবার বিকাল ৫টা থেকে জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেএনএফ।


 

শেয়ার করুন