চৌদ্দগ্রামে সোনার দোকানে ডাকাতি ও ব্যবসায়ীকে গুলি, একজন গ্রেপ্তার
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 09-02-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সোনার দোকানে ডাকাতির সময় গুলিতে এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। উপজেলার মিয়ারবাজারে মসজিদ মার্কেট নামের বিপণিবিতানের প্রীতি জুয়েলার্সে ডাকাতি শেষে পালানোর সময় গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাত দল। ওই সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা ধাওয়া দিয়ে ডাকাত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করেন। গতকাল শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আজ রোববার সকালে থানায় মামলা করেছেন প্রীতি জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী রবীন্দ্র চন্দ্র দত্ত (৪৫)। মামলায় আটক কাওসার আহমেদকে (৩৫) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি ছাড়া মামলায় অজ্ঞাত ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২৫ ভরি সোনা লুট করে নিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন বাদী। লুট করা সোনার বাজার মূল্য ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

 

এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি কাওসার আহমেদ (৩৫) রাজধানীর উত্তর খান থানার চান পাড়া এলাকার আবুল বাশারের ছেলে। তাঁর কাছ থেকে একটি ম্যাগাজিনসহ চারটি গুলি, দুটি চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস আটক করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, গতকাল রাত আটটার দিকে উপজেলার মিয়ারবাজারের প্রীতি জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হওয়া মোশারফ হোসেন মসজিদ মার্কেটের বিসমিল্লাহ টেলিকম নামক মুঠোফোন দোকানের স্বত্বাধিকারী। তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর বুকের ডান পাশে গুলি লেগেছে।

ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আজ দুপুরে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় কাওসার আহমেদকে স্থানীয় জনতা ধাওয়া দিয়ে আটক করে। থানায় মামলা হওয়ার পর তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পর তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ডাকাত দল দুটি গাড়ি নিয়ে এসেছিল। এর মধ্যে পালানোর সময় একটি গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়ায় সেটি ফেলে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা। অন্য ডাকাত সদস্যদের আটক এবং লুট হওয়া সোনা উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

 

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভাতিজা পলাশ চন্দ্র দত্তকে দোকানে বসিয়ে বাইরে বের হয়েছিলেন বলে জানান মামলার বাদী ও প্রীতি জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী রবীন্দ্র চন্দ্র দত্ত। দোকানে থাকা অন্যদের বরাত দিয়ে ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, রাত পৌনে আটটার দিকে ক্রেতা সেজে দোকানে প্রবেশ করে প্রথম দুই ডাকাত। এরপর বাকি ডাকাত সদস্যরা পিস্তলসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে দোকানে প্রবেশ করে পলাশকে জিম্মি করে ২৫ ভরি সোনা লুট করে নিয়ে যায়। তারা যখন পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন ডাকাত–ডাকাত বলে চিৎকার করে মার্কেটের গেট আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ী মোশারফ। এ সময় ডাকাতেরা তাঁর বুকের ডান পাশে গুলি করে। মোশারফ এখন কুমিল্লা মেডিকেলে।

একই বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আশিকুর রহমান বলেন, মার্কেটটির দ্বিতীয় তলায় মসজিদ। রাত পৌনে আটটার দিকে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন এশার নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে ছিলেন। হঠাৎ একটি মাইক্রোবাসে করে ডাকাত দলের সদস্যরা আসে। প্রথমে তাদের দুজন ক্রেতা সেজে প্রীতি জুয়েলার্সে প্রবেশ করে।

আশিকুর বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে সবচেয়ে বড় সোনার দোকান প্রীতি জুয়েলার্স। দুজন ভেতরে প্রবেশ করার পরপরই আরেকজন গাড়ি থেকে নেমে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এরই মধ্যে দোকানে প্রবেশ করা দুজন বিভিন্ন সোনার গয়না দেখতে থাকে। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা বাকি চার থেকে পাঁচজন ডাকাত পিস্তল নিয়ে বের হয়ে আসে। তারা প্রীতি জুয়েলার্সের ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সোনার গয়না লুটে নেয়। ডাকাতদের মধ্যে কয়েকজনের মুখে মাস্ক পরা ছিল; মাস্ক ছাড়া ছিল কয়েকজন।’

আশিকুর রহমান আরও বলেন, সোনা লুট করে ডাকাত দল গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনে মুঠোফোন দোকানের ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন ডাকাত–ডাকাত বলে চিৎকার দেন। পরে ডাকাতেরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে মোশারফের বুকে গুলি লাগে। এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাজারের ব্যবসায়ীসহ মানুষজন ধাওয়া করে এক ডাকাতকে আটক করেন। তবে অন্য ডাকাতেরা দ্রুত পালিয়ে যায়।


 

শেয়ার করুন