ইসরায়েলকে আচমকা ধাক্কা মিসরের
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 26-05-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলকে কেউ থামাতে পারছে না। গাজায় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সত্ত্বেও মিসর সীমান্তসংলগ্ন রাফায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। রাফার প্রায় কেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি ট্যাংকসহ সাঁজোয়া যান। আগেই রাফা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও গাজায় নিরাপদ আশ্রয় বলতে কোনো স্থান নেই।

রাফায় ইসরায়েল সর্বাত্মক অভিযান শুরুর সময় মিসরের এক ঘোষণা নেতানিয়াহুর ইসরায়েলের জন্য আচমকা ধাক্কা হয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর যে মামলা দক্ষিণ আফ্রিকা করেছে, তাতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিসর। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১২ মে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করছে, আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ অমান্য করছে। এ কারণে কায়রো আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

 

গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর ইরান বা তুরস্কের মতো কড়া ভাষায় কথা বলেনি মিসর। যদিও হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির তৎপরতায় প্রথম থেকেই সক্রিয় রয়েছে দেশটি। আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলায় মিসরের যোগ দেওয়ার ঘোষণা আচমকাই ধাক্কা হয়ে এসেছে ইসরায়েলের জন্য।
কেউ কেউ ভাবছেন, মিসরের এই ঘোষণা কি ১৯৭৯ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ক্যাম্পডেভিড শান্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আভাস?

কেন ধাক্কা

ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্য তথা উত্তর আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার যে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, তার যোগসূত্র বলা হয়ে থাকে মিসরকে। ইসরায়েল-মিসরের মধ্যে হওয়া ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি যার মূল ভিত্তি। ১৯৭৯ সালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল প্রথম কোনো আরব দেশের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ পায়।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক পরিচালক অ্যালন লিয়েলের মতে, মিসরের এই সিদ্ধান্ত সত্যিই ইসরায়েলের জন্য বড় এক কূটনৈতিক ধাক্কা। ইসরায়েলকে এটা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আল–জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের অবস্থানের মূল ভিত্তি মিসর। জর্ডান, বাহরাইন, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) যে দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক এগিয়েছে, সেটা মিসরের গত ৪০ বছরের প্রচেষ্টার ফল।

লিয়েলের মতে, ইসরায়েলের যে মানুষগুলো এখন প্রতিশোধের জন্য গাজা অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে, শুধু তাদের কথা শুনলে হবে না, ইসরায়েলকে বিশ্ব জনমতের কথাও শুনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্বিকভাবে বিস্তৃত দৃষ্টিতে দেখতে হবে, শুধু সামনের কয়েক সপ্তাহে গাজায় কী হবে, সেটা নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে ইসরায়েলের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে।’

ইসরায়েলি বাহিনী ইতিমধ্যে মিসর সীমান্তের সামরিক উপস্থিতি নিষিদ্ধ থাকা এলাকায় ঢুকে পড়েছে। ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে।

আইসিজে গত শুক্রবার রাফায় অভিযান বন্ধ করতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে কয়েক মিনিটের মধ্যোই রাফায় হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। আইসিজের নির্দেশ মানবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের কয়েকজন মন্ত্রী।

এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি করিম খান গাজায় সম্ভাব্য গণহত্যার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন, যার কঠোর সমালোচনা করছেন ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা।

শেয়ার করুন