ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গত বছরের ৭ অক্টোবর নজিরবিহীন হামলা চালান ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণক্ষয়ী এই দিনটি ঘিরে খোদ দেশটির ভেতরে কঠিন সব প্রশ্ন উঠছে। ওই ঘটনায় দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী অপ্রস্তুত এবং দ্রুতই বিহ্বল হয়ে পড়েছিল।
হামাসের হামলার বিষয়ে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে অবহিত করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে সেদিন কী ঘটেছিল, এসব পরিবারের বরাতে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
নাহাল ওজ নামের ওই ঘাঁটি ৭ অক্টোবর সকালে দখলে নিয়েছিলেন হামাসের বন্দুকধারীরা। ওই ঘাঁটির ৬০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হন। অন্যদের জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই দিন কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে দাপ্তরিক তদন্তের প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রকাশ করেনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তবে তারা ইতিমধ্যে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের ঘটনার বিষয়ে অবহিত করেছে। তাঁদের কয়েকজন সে বিষয়ে বিবিসিকে বিস্তারিত বলেছেন।
বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে সাজানোর প্রচেষ্টা থেকে বিবিসি ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলেছে। মারা যাওয়ার আগে সেনাদের পাঠানো বার্তাগুলো দেখেছে। আর হামলার সময় ঊর্ধ্বতনদের করা রিপোর্টিংয়ের বক্তব্যগুলো শুনেছে। এর মাধ্যমে হামলার তীব্রতা ও ভয়াবহতার একটি চিত্র দাঁড় করানো গেছে।
সবকিছু মিলিয়ে বিবিসির পর্যালোচনায় যেসব বিষয় ধরা পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: ওই ঘাঁটির সেনাদের চোখে ৭ অক্টোবরের আগে কিছু সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড ধরা পড়েছে, শুধু সীমান্তের নজরদারি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নারী সেনাদের চোখেই যে ধরা পড়েছে তা নয়। সেনারা দেখতে পান, হামলার কয়েক দিন আগে হঠাৎ করেই হামাসের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। হামলার সময় অনেক ইসরায়েলি সেনা ছিলেন নিরস্ত্র এবং দাপ্তরিক নিয়মের কারণে হামলার সময় সেনাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে পিছু হটতে হয়েছে। এ ছাড়া কিছু নজরদারি ক্যামেরা হয় অকার্যকর ছিল কিংবা হামাস সহজেই ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছিল।
নাহাল ওজ ঘাঁটিতে হামাসের হামলার একটি মুহূর্তছবি: টেলিগ্রাম থেকে নেওয়া
বিস্তারিত যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেন সীমান্তের কাছের একটি ঘাঁটিতে এত কমসংখ্যক সেনা অস্ত্রসজ্জিত ছিল। কেন প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও সতর্কতাকে আমলে নিয়ে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আক্রান্তদের সাহায্যে অতিরিক্ত সেনা পৌঁছাতে কেন এত দেরি হয়েছিল। কেন ঘাঁটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এতটা অরক্ষিত রাখা হয়েছিল।
এসব বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিবিসি। জবাবে তারা বলেছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাঝপথে রয়েছে তারা। এ তদন্তের মধ্যে নাহাল ওজ ঘাঁটির ঘটনা এবং এর আগেকার পরিস্থিতিও রয়েছে।
নাহাল ওজ ঘাঁটি গাজার সীমান্তবেড়া থেকে এক কিলোমিটার দূরে ছিল। ৭ অক্টোবর ভোর চারটায় নিজের পালার দায়িত্ব পালন শুরু করেন নারী সেনাসদস্য শ্যারন (এটা তাঁর প্রকৃত নাম নয়)। ওই ঘাঁটির ‘তাৎজপিতানিয়ত’ শাখার সদস্য ছিলেন তিনি। এই শাখার সব সদস্যই নারী। সীমান্তবেড়ার সঙ্গে বসানো নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা ছিল তাঁদের কাজ।
এই নারী সেনা সদস্যরা পালা করে ‘হামাল’ নামে পরিচিত ঘাঁটির যুদ্ধকক্ষে বসে কাজ করতেন। সেখানে থাকা মনিটরের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা গাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতেন।
ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ওই দিন ঘাঁটিতে অনেক সামরিক সদস্য নিরস্ত্র ছিলেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অপারেশন ডিভিশনের সাবেক প্রধান জেনারেল ইসরায়েল জিভ বলেন, তাঁর দায়িত্ব পালনের সময় সীমান্ত এলাকায় কখনো সেনারা নিরস্ত্র ছিলেন না।
নাহাল ওজ ঘাঁটির সশস্ত্র কর্মীদের মধ্যে ওই দিন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গোলানি ব্রিগেডের এক ইউনিট পদাতিক সেনা ছিল।