ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের মনোবল ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে ড্রোন হামলা দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে সোমবার (২জানুয়ারি) রাতে এক ভাষণে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পেয়েছেন মস্কো ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করে আরও হামলা চালাবে।
কিয়েভ থেকে রাতের ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ড্রোন হামলা দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে ইউক্রেনকে 'নিঃশেষ' করার পরিকল্পনা করেছে। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে তারা যতই হামলা করুক না কেন আমরা এর জন্য সবকিছুই করব। সন্ত্রাসীরা যে লক্ষ্য নিয়েছে তা ব্যর্থ করে দিতে হবে।
জেলেনস্কি বলেন 'এখন সময় এসেছে আকাশ প্রতিরক্ষায় জড়িত প্রত্যেকের বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া উচিত।' তিনি আরও বলেছেন, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে কিছু হবে না; কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।
ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ান ড্রোন হামলা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। গত তিন রাতে মস্কো ইউক্রেনের প্রায় সব শহর এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। জেলেনস্কি বলেছেন, যে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা নতুন বছরের শুরুতেই ৮০টিরও বেশি ইরানের তৈরি ড্রোনকে গুলি করে ফেলেছে।
রাশিয়া কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে। তাদের হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধ্বংস হয়েছে। এতে ভয়ংকর শীতের সময় দেশটির লাখ লাখ মানুষকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে।
এদিকে অধিকৃত দোনেস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৬৩জন সেনা নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে রাশিয়া। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সোমবার (২জানুয়ারি) রাশিয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমার্স গাইডেড রকেট সিস্টেম ব্যবহার করে দোনেস্কের পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাকিভকার ‘অস্থায়ী ঘাঁটিতে’ ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
দুটি ক্ষেপণাস্ত্র বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ভূপাতিত করা হয়। বাকি চারটি একটি ভবনে আঘাত হেনে ৬৩ জন সেনা নিহত হয়েছে। রোববার (১জানুয়ারি) ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, হামলায় ৪০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে।
এ ছাড়া ৩০০ জন আহত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে রাশিয়ান নিয়ন্ত্রিত মাকিভকাতে একটি ভোকেশনাল কলেজ ভবন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে আল জাজিরা স্বাধীনভাবে এই ছবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়ান সেনা নিহতের যে সংখ্যা দিয়েছে তা সত্যি হলে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে মস্কো আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রাশিয়ান বাহিনীর প্রতি এটি একক মারাত্মক হামলা। মস্কো-সমর্থিত দোনেস্কের কর্তৃপক্ষও হামলায় হতাহতের কথা স্বীকার করেছে।
এই অঞ্চলের রাশিয়া-সমর্থিত এককজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড্যানিল বেজসোনভ বলেছেন, শনিবার মধ্যরাতে ভোকেশনাল কলেজটি হিমার্স রকেট আঘাত হেনেছে। বেজসোনভ টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপের একটি পোস্টে বলেছেন, সেখানে অনেকে নিহত ও আহত হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা এখনও অজানা। ভবনটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।