স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণাল য় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি বলেছেন, হতদরিদ্র বাংলাদেশ আজ উন্নতশীল দেশ হয়েছে। গ্রামীণ প্রকল্প বাস্তবায়নে পার্বত্য অঞ্চলকে প্রধান্য দেয়া হবে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও পার্বত্যমন্ত্রীর সুপারিশ বিশেষ বিবেচনা করবে এলজিইডি। বান্দরবানে বর্তমানে প্রায় ১৩শত কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত পার্বত্য এলাকার চেহারা আরো পাল্টে যাবে।
নতুন নতুন প্রকল্পে বান্দরবানকে অন্তর্ভুক্তি করা হবে। উন্নয়ন কাজে যেন কোন বৈষম্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, গ্রামীণ আদালত সারা বাংলাদেশে পাইলট প্রকল্প হিসাবে চলমান রয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এটা নেই।
ইউএনডিপি ও ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের অর্থায়নে বাংলাদেশ মডেল হিসাবে কাজ করছে। আমরা সফলভাবে কাজটি করতে পেরেছি। পর্যায়ক্রমে এইটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে। গ্রামীণ আদালতে স্থানীয় আইনের সাথে সমন্বয় করে এইটি পরিচালনা করতে হবে।
অবকাঠামো নির্মাণে সমতলের চেয়ে পাহাড়ে বেশি বরাদ্দ দিতে সুপারিশ করেছেন, পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় বিষয়টি আমরা মাথায় রেখে বরাদ্দ দিব। তবে কাজের গুণগত মানের বিষয়টি আপোষ করা হবেনা। ইউনিয়ন পরিষদ গুলো ক্ষমতায় করতে কাজ করা হবে।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়া রি) দুপুর ১টায় বান্দরবানের লামায় এলজিইডি কর্তৃক নবনির্মিত লামা উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এইসব কথা বলেন, এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি। অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
এসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন, বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, এলজিইডি বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার, বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ইসমাল বেবী, লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম, এলজিইডি লামা উপজেলা প্রকৌশলী আবু হানিফ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল।
এলজিআরডি মন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি’র নেতাদের বক্তব্যের সাথে তাদের কোন মিল নাই। এরা ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশের দালালি করতঃ এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে আর পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের দালালি করত। এরা চতুর, এরা বুদ্ধিমান। এদের সাথে আওয়ামী লীগের কোন মিল নেই। আওয়ামী লীগের নেতারা যা বলে তা করে। বিএনপি’র নেতা ও তাদের ছেলেরা মিথ্যাচার এবং লুটপাট করতে জানে।
বিএনপি বলে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসছে, কিন্তু এগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। কিন্তু তারা ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। বোমাবাজি, হত্যা, ঝামেলা ও ক্যু করার মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসা বিএনপির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান মানুষকে গুলি, মোটর সাইকেল দিয়ে ভোট বাক্স ছিনতাই করে নিজেরা সিল মেরে ১০০% চেয়ে বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
জিয়াউর রহমান ৫শত ভোটের জায়গায় ৬শত ভোট নিয়ে হ্যাঁ না ভোট করেছিল। ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে তখন আমার নিজের এলাকায় গেইট ভেঙ্গে, ভোট কেন্দ্র ভাংচুর, কেন্দ্র দখল ও মানুষ পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে ওরা ক্ষমতায় আসে। সেটাতে তারা বলে সুষ্ঠু নির্বাচন। অর্থাৎ বিএনপি যখন ক্ষমতায় যাবে ওটা সুষ্ঠু নির্বাচন, আর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় যায় ওটা ভেজাল নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে সে দায় আওয়ামী লীগের কেন হবে ? বিএনপি বোমাবাজি, মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি, কিবরিয়া সাহেব কে হত্যা, ২১ আগস্টের গেনেট হামলা করে শেখ হাসিনা কে হত্যার চেষ্টা, আইভি রহমানকে হত্যা, বাংলা ভাই মানুষ মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখা, আহসান উল্লাহ মাষ্টারকে হত্যা করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্ত্যব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখান না, মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। এলজিইডির অর্থায়নে এলাকায় ৬৮ কোটি ১৮ লক্ষ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ২শ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছে। তাই মানুষ এখন বিচ্ছিন্ন নয়। উন্নয়নের কারনে আমরা পাহাড় ও সমতলের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের অবকাঠামো খাতে উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী চমক দেখিয়েছেন। দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ফিতা কেটে ও ফলক উন্মোচনের মধ্যদিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী ‘লামা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনসহ মোট ৮ কোটি ৭০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫১ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এলজিইডি বাস্তবায়নাধীন উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ৬ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ সম্প্রসারিত ভবন ও হলরুম নির্মাণ করা হয়। একইসাথে এলজিইডির বাস্তবায়নে ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বাসভবন এবং ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইউএনও বাসভবন নির্মাণ করা হয়।
উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনটি ৬ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ৪ তলা মূল ভবন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রতি ফ্লোরে ৪২৫০ বর্গফুট করে মোট ১৭ হাজার বর্গফুট এর মধ্যে ৩০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া ৪ হাজার বর্গফুটের হলরুমসহ সর্বমোট ২১ হাজার বর্গফুটে নির্মিত ভবনে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী দুপুর ২টায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন এরপর এলজিআরডি মন্ত্রী বিকেল ৪টায় লামার সরই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিদর্শন করে বিকেল ৫টায় লামা ত্যাগ করবেন।