প্রেসিডেন্টকে হত্যার জন্য দুই বছর অপেক্ষা করেছিলেন আততায়ী
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 01-05-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

আজ পয়লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। আজ থেকে ঠিক ৩১ বছর আগে এই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল এক শোভাযাত্রার। তাতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার। তিনি হাজিরও হয়েছিলেন। তবে জানতেন না, সেখানেই আততায়ীর হাতে প্রাণ হারাবেন তিনি।

১৯৯৩ সালের শ্রমিক দিবসের ওই শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল প্রেমাদাসার রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)। বেলা পৌনে ১টার দিকে শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি নিজেই। এমন সময় ভিড়ের মধ্য থেকেই বেরিয়ে এলেন এক বাইসাইকেল আরোহী। শরীরে বাঁধা শক্তিশালী বোমা। প্রেমাদাসার কাছাকাছি এসে সেই বোমায় বিস্ফোরণ ঘটালেন। নিমেষেই সব শেষ।

আত্মঘাতী ওই হামলায় প্রেমাদাসা ছাড়াও তাঁর দেহরক্ষী ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রাণ হারান ১৭ জন। আহত হন ৩৮ জন। পরদিন ২ মে হামলার ঘটনার খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হয় প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। শিরোনাম ছিল ‘আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর হাতে নিহত শ্রীলঙ্কার নেতা’। তাতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে আসে হামলার ভয়াবহ সব চিত্র।

হামলার পর পুরো এলাকা মানুষের ‘রক্তে-মাংসে একাকার’ হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান সিডনি চন্দ্রশেখর।

যেমন সেদিন প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসার সঙ্গে ছিলেন তাঁর মুখপাত্র ইভান্স কোরি। হামলার কিছুক্ষণ আগে কারও সঙ্গে জরুরি কথা বলতে কিছুটা দূরে যান তিনি। এ সময়ই শোনেন বিস্ফোরণের শব্দ। কোরি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সাদা জামা ও সবুজ ক্যাপ পরে ছিলেন। সবেমাত্র গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের দিকে হাত নাড়াচ্ছিলেন। তখনই বিস্ফোরণ। আমি তাকিয়ে দেখলাম, মানুষের শরীর ছিটকে আকাশে উঠে গেছে।’

হামলার পর পুরো এলাকা মানুষের ‘রক্তে–মাংসে একাকার’ হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান সিডনি চন্দ্রশেখর। আর ইভান্স কোরির কাছে ঘটনাস্থলটিকে মনে হয়েছিল ‘যুদ্ধক্ষেত্র’। সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘বিস্ফোরণের ৩০ মিনিট পরও আমরা প্রেসিডেন্টের কোনো খবর পাইনি। মনে করেছিলাম, নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে অন্য কোথাও নিয়ে গেছেন। তবে পরে জানা যায়, প্রেসিডেন্টের ছিন্নভিন্ন মরদেহ পুলিশ হাসপাতালে একটি মর্গে নিয়ে রেখেছে।’

হামলার পর পরই কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেনি শ্রীলঙ্কা সরকার। পাঁচ ঘণ্টা সময় নিয়েছিল। সন্ধ্য ছয়টায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিবিসির একটি খবর চালিয়ে প্রথম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। সেদিন রাতে শ্রীলঙ্কায় জারি করা হয় কারফিউ। নতুন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী দিনগিরি বান্দা উইজেতুঙ্গে।

রণসিংহে প্রেমাদাসার জন্ম ১৯২৪ সালের ২৩ জুন কলম্বোর বস্তিতে। রিকশা ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতেন তাঁর বাবা।

প্রেমাদাসাকে যখন আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়, তখন শ্রীলঙ্কায় চলছে গৃহযুদ্ধ। দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই করছে তামিল জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম (এলটিটিই)। পয়লা মের বোমা হামলার পর সন্দেহের তির প্রথমেই যায় তাদের দিকে। সন্দেহের তালিকায় ছিল বিরোধীদলীয় প্রধান ললিথ আথুলাথমুদালির সমর্থকদের দিকেও।

প্রেমাদাসাকে হত্যার মাত্র কয়েক দিন আগে ২৩ এপ্রিল গুলি করে খুন করা হয় আথুলাথমুদালিকে। ওই ঘটনায় এলটিটিইকে দায়ী করে প্রেমাদাসা সরকার। তবে আথুলাথমুদালির সমর্থকরা মনে করতেন, তাঁদের নেতাকে হত্যার পেছনে ছিলেন প্রেমাদাসা নিজেই।

যে হত্যাকাণ্ডের মামলার সুরাহা হয়নি

শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই বা তামিল টাইগারদের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছার চেষ্টা করছিলেন রানাসিংহে প্রেমাদাসা। এ প্রচেষ্টা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনের আমলে প্রথম শ্রীলঙ্কার সরকারের সঙ্গে তামিল টাইগারদের সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে ১৯৮৭ সালে এ শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে যোগ দেয় ভারত। তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাজীব গান্ধী। তিনি বর্তমান কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধীর স্বামী।

মহিদিনের নারী ও মদের প্রতি আসক্তি ছিল। প্রেমাদাসা তা জানতেন না। এই সুযোগই নিয়েছিল এলটিটিইর পাঠানো ঘাতক কুলাভিরাসিংগাম ভিরাকুমার ওরফে বাবু।

সে সময় ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী তামিল টাইগারদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে শ্রীলঙ্কার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে মোতায়েন করা হয় ভারতীয় সেনা। এতে হিতে বিপরীত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তামিল টাইগাররা। তাদের হাতে দেড় হাজারের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হন।

১৯৮৮ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন প্রেমাদাসা। তাঁর তৎপরতায় পরের বছর শ্রীলঙ্কা ছাড়েন ভারতের সেনারা।

১৯৯১ সালে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন রাজীব গান্ধী। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয় এলটিটিইকে। তবে সংগঠনটি সেই অভিযোগ নাকচ করে দেয়। প্রেমাদাসার হত্যার দায়ও নেয়নি তারা। তবে এলটিটিই যাই বলুক না কেন, প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ডের পর এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল ভারত সরকার। তদন্তে অভিযুক্ত করা হয় এলটিটিই নেতাদেকেই।

ভারতের তদন্তের বিষয়টি উঠে এসেছে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজির ইমেরিটাস অধ্যাপক রবীন্দ্র ফার্নান্দোর লেখা ‘দ্য অ্যাসাসিনেশন অব প্রেসিডেন্ট অব শ্রীলঙ্কা’ বইয়ে। তাঁকে পয়লা মের হত্যাকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিল কলম্বোর অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট। বইতে প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর আরও নানা তথ্য দিয়েছেন তিনি।

যেমন বলা চলে, প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারত জোর দিয়ে তদন্ত করলেও খোদ শ্রীলঙ্কায় তেমনটি হয়নি। এ নিয়ে শুরু থেকেই ব্যাপক গড়িমসি দেখা দেয়। একটা অভিযোগ আছে, হত্যাকাণ্ডের পর ওপর মহলের রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে ঘটনাস্থলের সব তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা হয়। ফলে এ ঘটনায় করা মামলার তদন্তকারীদের নির্ভর করতে হয়েছিল শুধু সাংবাদিকদের তোলা ছবির ওপর।

তা ছাড়া প্রেমাদাসা নিহত হওয়ার এক বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় আসে বিরোধী দল। নতুন শাসকদের মামলার বিষয়টি নিয়ে অতটা আগ্রহ ছিল না বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘দ্য অ্যাসাসিনেশন অব প্রেসিডেন্ট অব শ্রীলঙ্কা’ বইয়ে রবীন্দ্র ফার্নান্দো লিখেছেন, সব মিলিয়ে প্রেমাদাসা হত্যা মামলা তেমন একটা এগোয়নি। ১২ বছর পর পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে গ্রেপ্তার ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দেয় সরকার। এভাবেই অমীমাংসিত এক ঘটনা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয় প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ড।

 

ভৃত্যের প্রতি অতি বিশ্বাসই কি কাল হয়েছিল প্রেমাদাসার

রবীন্দ্র ফার্নান্দো তাঁর বইতে প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি এলটিটিইকে অভিযুক্ত করেননি। তবে এমন সব তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেছেন—যাতে সংগঠনটির দিকেই সব সন্দেহ যায়। বইতে আরেকজনেরও নাম নিয়েছেন ফার্নান্দো। তিনি মহিদিন। প্রেমাদাসার এই ভৃত্য তাঁর বাসভবন ‘সুচরিতার’ সব বিষয় দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। ফার্নান্দোর মতে, মহিদিনের প্রতি অতি বিশ্বাসই কাল হয়েছিল প্রেমাদাসার জন্য।

মহিদিনের নারী ও মদের প্রতি আসক্তি ছিল। প্রেমাদাসা তা জানতেন না। এই সুযোগই নিয়েছিল এলটিটিইর পাঠানো ঘাতক কুলাভিরাসিংগাম ভিরাকুমার ওরফে বাবু। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৩ বছর। দুই বছর ধরে তিনি মহিদিন ও নিরাপত্তাকর্মীদের মদ ও নারীর নেশায় এমনভাবে মজিয়েছিলেন যে, যখন খুশি সুচরিতায় প্রবেশের সুযোগ ছিল তাঁর। আর বাবু নিজেকে এমনভাবে সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন, যে কেউই ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁর হাতেই প্রেসিডেন্টের জীবননাশ হবে।

‘দ্য অ্যাসাসিনেশন অব প্রেসিডেন্ট অব শ্রীলঙ্কা’ বইয়ে রবীন্দ্র ফার্নান্দো বলেছেন, প্রেমাদাসার হেলিকপ্টারে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাঁকে হত্যার সুযোগ ছিল বাবুর। এমনকি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বিছানার নিচে বোমাও রাখতে পারতেন তিনি। তবে এমনটি করেননি। এলটিটিইর কাছ থেকে নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। অবশেষে ১৯৯৩ সালের ১ মে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন তিনি। ময়নাতদন্তে সাইকেলে চড়ে আত্মঘাতী হামলাকারী যে বাবু ছিলেন, সেটিও নিশ্চিত করা হয়েছে।

বস্তি থেকে সিংহাসনে

রানাসিংহে প্রেমাদাসার জন্ম ১৯২৪ সালের ২৩ জুন কলম্বোর বস্তিতে। রিকশা ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতেন তাঁর বাবা। ছেলেবেলাতেই তিনি অংশ নিয়েছিলেন শ্রমিক অধিকার আন্দোলনে। ১৯৪৬ সালে তিনি একজন পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগ দেন লেবার পার্টিতে। মাত্র চার বছরের মাথায় তিনি দলটির যুব সংগঠনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫০ ও ১৯৫৪ সালে দুই দফায় কলম্বোর পৌর কাউন্সিল নির্বাচিত হন প্রেমাদাসা। পরে ১৯৫৫ সালে কলম্বোর ডেপুটি মেয়র পদে বসেন তিনি।

১৯৫৬ সালে লেবার পার্টি ছেড়ে ইউএনপিতে যোগ দেন প্রেমাদাসা। এই দলের হাত ধরেই একটু একটু করে আরও সামনে এগোন তিনি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এর পরের বছরই বসেন প্রেসিডেন্টের গদিতে।

রবীন্দ্র ফার্নান্দো তাঁর বইয়ে লিখেছেন, রাজনৈতিক জীবনে এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে কোনো ‘গডফাদার’ ছিল না প্রেমাদাসার। এমনকি শ্রীলঙ্কার অনেক রাজনীতিবিদের মতো শক্তিশালী পারিবারিক সমর্থনও ছিল না তাঁর।

প্রেমাদাসাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংঘাতের জেরে নড়বড়ে অর্থনীতি সবেমাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করে তিনি সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তাঁদের জন্য হাজার হাজার মডেল বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন।

মৃত্যুর আগের বছরও প্রেমাদাসা গ্রামাঞ্চলে ২০০টি পোশাক কারখানা তৈরির একটি প্রকল্প চালু করেছিলেন। সে সময় শ্রীলঙ্কায় অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য তারিফ পেয়েছিলেন তিনি।

প্রেমাদাসার মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, ‘দেশের উন্নতির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা। শ্রীলঙ্কার সব মানুষের জীবনমান টেনে তুলেছেন তিনি। তাঁকে হত্যা করাটা নৃশংস এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’

তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, ডেইলি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, দ্য অ্যাসাসিনেশন অব প্রেসিডেন্ট অব শ্রীলঙ্কা

শেয়ার করুন