পেশাগত অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ (আইএডব্লিউপি) পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম। কমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
মাহমুদা খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) এক টুইট বার্তায় অ্যাওয়ার্ডের বিষয়টি ঘোষণা করে আইএডব্লিউপি।
জননিরাপত্তার উন্নতি, অপরাধ ও অপরাধমূলক আচরণ হ্রাসসহ সামাজিক বৈষম্য নিরসন এবং নিজ বাহিনীসহ সাধারণ নাগরিকদের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে অনুকরণীয় ভূমিকা রাখাসহ পুলিশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হওয়ায় কমিউনিটি সার্ভিস ক্যাটাগরিতে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান হয়।
আগামী ১৭ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫দিন ব্যাপী এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি কমিউনিটি সার্ভিস বিভাগে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। এটা সত্যিই আমার জন্য গর্বের, সম্মানের এবং কর্মের মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ, মানুষকে সেবা প্রদানে আমার আন্তরিক প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ আমাকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে।’
২৮তম বিসিএস পুলিশের এই কর্মকর্তা ২০১০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। পরে প্রশিক্ষণ শেষ শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগদান করেন সিলেট জেলা পুলিশে। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী কমিশনার সদর ও ট্রাফিক হিসেবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি থেকে অপরাধ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা এ নারী ব্যক্তিজীবনে এক সন্তানের মা। স্বামী গণমাধ্যমকর্মী। কুমিল্লার তিতাসে পৈতৃক বাড়ি হলেও বাবার চাকরি সূত্রে জন্ম চট্টগ্রামে। বাবা এএফএম জাহেদুল ইসলাম সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।
মাহমুদা বেগম ছাড়াও আইএডব্লিউপি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ এর জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের আরও ৬ পুলিশ কর্মকর্তা।
তারা হলেন—ব্রেভারি (সাহসিকতা) ক্যাটাগরিতে বেডফোর্ডশার পুলিশের কনস্টেবল পাত্রিজিয়া ভেটেরি, মেন্টরস অ্যান্ড কোচিং ক্যাটাগরিতে জর্জিয়া ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ ইন্সপেক্টর ইভ রোজার, লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে ইউক্রেনের পুলিশ মেজর ওলহা ইউসকেভিচ, প্রিভেনশন অ্যান্ড ডিটেকশন অব ভায়োলেন্স এগইনেস্ট উইমেন ক্যাটাগরিতে কেনিয়ার পুলিশ সুপার জিপ্পুরাহ এনদেরিতো, সিভিলিয়ান অব দ্য ইয়ার দুবাই পুলিশের সিভিল এমপ্লয়ি রিম আল মুহাইরি, এক্সিলেন্স ইন পারফরমেন্স ক্যাটাগরিতে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের ডিটেক্টিভ পুলিশ সুপার সিমুন ভান দের স্লয়িস, হি ফর শি ক্যাটাগরিতে ইন্দোনেশিয়া পুলিশের পুলিশ জেনারেল লিস্টঅও সিগিত প্রাভো।
১৯১৫ সাল থেকে নারী পুলিশ অফিসারের মানোন্নয়ন, শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পুলিশ উইমেন। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশ নামে সংস্থাটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
আইএডব্লিউপি আন্তর্জাতিকভাবে নারী পুলিশদের স্বার্থ রক্ষাসহ মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে বিশ্বজুড়ে কাজ করছে। অ্যালিস স্টেবিন্স ওয়েলস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পুলিশ সদস্য যিনি অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন।
প্রসঙ্গত, সিএমপিতে থাকাকালীন ২০১৩ সালে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে সোয়াত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদা। সিএমপিতে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালে জাতিসংঘ মিশনে যান তিনি। মিশনে থাকাকালীন একই বছর পদোন্নতি পেয়ে হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সেখান থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জে।
২০১৯-২০ সালের বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ (পিএম) পেয়ে অপরাধবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) অধ্যয়ন করতে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভাসিটিতে যান মাহমুদা বেগম।
দীর্ঘ দেড় বছর অধ্যয়ন শেষে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট অপরাধবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন বাংলাদেশ পুলিশের মেধাবি এ কর্মকর্তা। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন রাঙামাটি জেলা পুলিশে। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশে।
সিএমপিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কাজ করার সুযোগ পান মাহমুদা বেগম। তৎকালীন ১১ বছর বয়সী একজন ভারতীয় শিশু কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে আসে। সেই সময় শিশুটি শুধু নিজের দেশের নাম ভারত ছাড়া আর কোনো তথ্য দিতে পারেনি। মাহমুদা বেগম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সহায়তায় অসহায় ভারতীয় শিশুটিকে ভারতে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে প্রশংসিত হন। এছাড়াও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে ফরমালিনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সাহসী অবদান রাখেন তিনি।