এস আলমমুক্ত হওয়ার পর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭৯৪ কোটি টাকা ঋণ আদায়
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 07-10-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার পর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৭৯৪ কোটি টাকার ঋণ আদায় করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দখল হয়ে যাওয়ার পর ব্যাংকটিতে সুশাসনের ঘাটতি হয় এবং সে সময় নিয়ম মেনে ঋণ বিতরণ করা হয়নি। তবে এখন ব্যাংকটিতে আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অল্প সময়ে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করেন তিনি।

আজ সোমবার ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন এম সাদিকুল ইসলাম। এ সময় ব্যাংকটির পরিচালক মাকসুদা বেগম, মো. মোরশেদ আলম খন্দকার ও মো. আনোয়ার হোসেনের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আবদুল হান্নান খান, বিনিয়োগ বিভাগের প্রধান মো. নাজমুস সায়াদাতসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৫ আগস্ট এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীকে পরিচালক ও চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পর্ষদ পুনর্গঠনের পর পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির এমডি জাফর আলম, ডিএমডি হাবিবুর রহমান ও খোরশেদ আলম। তাঁদের মধ্যে প্রথম দুজন এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর ব্যাংকটি থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় দুই বছর ধরে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকটিকে সহায়তা দিয়ে আসছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সেই সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাংকটি তারল্যসংকটে পড়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন ব্যাংকটিকে সরাসরি টাকা ধার না দিয়ে গ্যারান্টি সুবিধার মাধ্যমে অর্থের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে বর্তমানে এভাবে সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ৯০০ কোটি টাকা গ্যারান্টি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৫০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। আরও কয়েকটি ব্যাংক টাকা ধার দেওয়া ও আমানত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা আবারও ১৮টি সেবা প্রতিষ্ঠানের সেবা মাশুল নেওয়া শুরু করেছি। গ্রাহকেরা শাখা থেকে ছোট পরিমাণে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন। রেমিট্যান্সের টাকা পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সামনে এটিএম ও ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচের সেবাও চালু হয়ে যাবে।’

ব্যাংক থেকে কত টাকা বের করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, এই ব্যাংক থেকে কে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তা চিহ্নিত করা গেছে। এস আলম গ্রুপ নামে ও বেনামে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। তাদের ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানে আরও ৪৭১ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান চালু আছে, ফলে এসব টাকা আদায় করা সম্ভব হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ সোয়েব বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ব্যাংকের তারল্যসংকট শুরু হয়। তবে নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) ঘাটতি হলে ঋণ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। সেটা এই ব্যাংকে হয়নি। ব্যাংকের ঋণ থামানোর কোনো চেষ্টা করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ম মেনে সময়মতো পদক্ষেপ নিলে ব্যাংকটির এমন অবস্থা হতো না। তিনি জানান, বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনায় চলতি বছরে তাদের ১৩০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। বেশি দামে ডলার কিনে সরকারি ব্যাংকের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

ব্যাংকের পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম বলেন, ‘ব্যাংক তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কঠোর হওয়ার প্রয়োজন ছিল। জানি না কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা কেন করতে পারেনি। তবে এসব বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্ধারণ করা হতো। তারল্যসংকটের পরও ঋণ চালু রাখাসহ এসব ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সুবিধা দিয়েছিল, তা আমি সমর্থন করি না।’


 

শেয়ার করুন