মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় থাকা কোটা বাতিল, এমবিবিএস ভর্তিতে গতকাল রোববার প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে আবার প্রকাশের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন।
গতকাল রাতের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সোমবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুরের দিকে তাঁরা শহীদ মিনার ছেড়ে যান। বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপিতে আজ রাত আটটার মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে আবার প্রকাশের দাবি জানানো হয়।
এর আগে সমাবেশে অবিলম্বে মেডিকেল ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল এবং মেডিকেলের এই ফলাফল বাতিল ও ফল পুনঃ প্রকাশের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। আজকের মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিলসহ পুনঃ প্রকাশের দাবিও জানানো হয় সমাবেশে। সমাবেশে তাঁরা ‘অবিলম্বে ফলাফল বাতিল করো, করতে হবে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মেডিকেলের ফলাফল, পুনঃ প্রকাশ করতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শহীদ মিনারে অবস্থান নেওয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ তানিম বলেন, ‘গতকাল ভর্তি পরীক্ষার যে ফলাফল দিয়েছে, এতে কোটার কারণে অনেক অযোগ্যরাও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এমনকি অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এই কোটাপ্রাপ্ত যত শিক্ষার্থী আছে, তাদের অবিলম্বে ভর্তি বাতিল করতে হবে। আগামী বছরগুলোতে যেন কোটাপ্রথা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়, এই দাবিতে আজ আমরা রাজপথে নেমেছি।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কোটা নিয়ে এত বড় আন্দোলনের পরও ফের আবার আমাদের আন্দোলনে নামতে হলো কেন?’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নিটোরের সহযোগী অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর ভাষ্য, ‘আমার একজন ছেলে বা মেয়ে ৭৩ পেয়েও মেডিকেলে চান্স পাচ্ছে না অথচ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৬ বা ৩৭ পেয়েও চান্স পেয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে এই বৈষম্য থাকবে কেন? আমরা এই ফল মানি না।’
সমাবেশে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, ‘এ বছর নাতি-নাতনি কোটায় কাট মার্কের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর কম পেয়েও সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়েছে, যা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব ধরনের কোটার বিলুপ্তি চাই। আজকের মধ্যে কোটাবৈষম্য বাতিল করে আবার ফলাফল প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।’
মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে ডেন্টাল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা, ২০ জানুয়ারি
মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি মেডিকেলে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক কোটা চালু রয়েছে। অনেকে ৭২ নম্বর পেয়েও প্রকাশিত ফলাফলে টেকেনি। অথচ অনেকে ৪০ পেয়েও ফলাফলে জায়গা পেয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পোষ্য কোটাসহ অযৌক্তিক কিছু কোটা রয়ে গেছে। আমরা চাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃ প্রকাশ করা হয় এবং সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করা হয়।’
এর আগে গতকাল রাতেও একই দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে ৫ হাজার ৩৭২ পরীক্ষার্থী ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।