দেশে গরমের তীব্রতা বাড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য মহাখালীর উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ-আইসিডিডিআরবি) ছুটে আসছে। ওয়ার্ডগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ হওয়ায় হাসপাতাল আঙিনায় দুটি বড় তাঁবু টানিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাতেও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। চাপ সামাল দিতে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ১২ দিনে ১৩ হাজার ৪৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আইসিডিডিআরবি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তাদের হাসপাতালে সিট খালি নেই, হাসপাতালের বাইরে সাতটি তাঁবুতেও রোগীদের রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এখন আর রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, এখানে আসা কোনো রোগীকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তারা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করছেন। হাসপাতালের রিসার্চ ফিজিশিয়ানদের অনেকে সেবা দিচ্ছেন। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। চাপ আরও বাড়লে প্রয়োজনে তাদের অফিস কক্ষগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কেউ ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে নিকটস্থ কেন্দ্রে গেলে এখানে চাপ কমবে। এ ছাড়া রোগীর সঙ্গে এটেনডেন্সদের অযথা ভিড় না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। কারণ বেশি জনসমাগমে রোগীদের সেবা ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়। গতকাল দুপুরে আইসিডিডিআরবি ঘুরে দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় রোগীদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্মিলিতভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেবা দেওয়ার ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি।
দুপুরে দেখা গেছে, অসংখ্য রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালে আছেন। হাসপাতালের প্রতিটি সিটে রোগীতে ভর্তি। এসব রোগীর বেশির ভাগই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসছেন। আবার কিছু রোগী অ্যাম্বুলেন্সে করে আসছেন। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার পর রোগীদের বহনের জন্য পর্যাপ্ত হুইলচেয়ার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন অনেক রোগীর স্বজন। হুইলচেয়ার না পেয়ে রোগীদের কোলে করে হাসপাতালের ভিতরে নিতে দেখা গেছে।
জরুরি বিভাগের সামনে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। সিট খালি না থাকায় অনেক রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছে। যারা ভর্তি হতে পারছেন, তাদের স্বজনদের রোগী ভর্তি করতে হাসপাতালের এদিক-ওদিক দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় একজন রোগী জানান, উত্তরা থেকে এসেছেন তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় তাকে ১১-১২ বার টয়লেটে যেতে হয়েছে। এখানে আসার পরও দুবার টয়লেটে গেছেন। কিন্তু তাকে ভর্তি না করে ‘সিট নেই’ বলে বিদায় করে দিয়েছেন ডাক্তার। সঙ্গে মাত্র তিনটি স্যালাইন ও এক পাতা ট্যাবলেট দিয়েছেন। নিজামের মতো অনেক রোগীকে চিকিৎসা নিয়ে পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল ছাড়তে হচ্ছে। এদিকে আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১২ দিনে হাসপাতালটিতে ১৩ হাজার ৪৮৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ম্যানেজার তারিফ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর, টঙ্গী ও উত্তরা থেকে বেশি রোগী আসছেন।