মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে নিহত হওয়া দেহাবশেষ মিরপুরের মুসলিম বাজার বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। ঐ নিহত শহীদদের দেহাবশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় সমাহিত করা হয়েছে।
আজ ১১ এপ্রিল (সোমবার) সেই বীর শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনী। এই উদ্যোগের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ড. এম এ হাসান। তিনি এই দেহাবশেষগুলো নিয়ে গবেষণা করেন এবং তাদের পরিচয় উদঘাটনেরও চেষ্টা করেন।
সেনাবাহিনীর উদ্যোগে মিরপুর থেকে প্রায় ৫ হাজার কঙ্কাল এবং বেশ কিছু খুলি উদ্ধার করা হয়। তবে এ সকল দেহাবশেষের আলাদাভাবে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় শহীদদের দেহাবশেষের অবশিষ্টাংশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করার পর সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই দায়িত্ব পালন করতে পেরে সেনাবাহিনী গর্বিত। সেনাবাহিনীর উপর এমন মহতী কর্মের দায়িত্বভার অর্পণ করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
আজ (সোমবার) মিরপুর বধ্যভূমিতে রাষ্ট্রীয় সকল আচার মেনে প্রতীকীভাবে ৫টি কবরে এই বীর যোদ্ধাদের দেহাবশেষ সমাহিত করা হয়।
শুরুতে শহীদদের উদ্দেশে নীরবতা পালন, রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর জন্য গান স্যালুট প্রদান করা হয়। এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং ড. এম এ হাসান শহীদদের কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য বধ্যভূমিতে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায়। মিরপুর মুসলিম বাজার বধ্যভূমি এসব বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট রাজাকারদের হিংস্রতা যে কত ভয়াবহ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে। ২৭ জুলাই ১৯৯৯ তারিখে মিরপুর ১২নং সেকশনের নূরী মসজিদের সংস্কার কাজ করার সময় কূপ খনন করলে বেরিয়ে আসে ১৯৭১ সালের সেইসব হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিচিহ্ন। মাথার খুলি ও হাড়গোড়ের সাথে বেরিয়ে আসতে থাকে মানুষের চুলের বেনী, ওড়না, কাপড়ের অংশবিশেষসহ শহীদদের বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী।
উদ্ধারকৃত হাড় ও খুলিগুলো একাত্তরের গণহত্যার নিদর্শন কি না তা নিশ্চিতকল্পে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস্ ফাইন্ডিং কমিটি কর্তৃক মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের নিদর্শনসমূহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং শহীদদের রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজনের ‘টিস্যু স্যাম্পল’ নিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে দেহাবশেষসমূহের কিছু মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এবং কিছু সেনাবাহিনীর যাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট দেহাবশেষসমূহ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্মানজনক ভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর অন্যান্য পদবীর সেনাসদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।