টিসিবির কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, কিছু কার্ড বাদ দেওয়া হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 10-12-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, টিসিবি সারা দেশে যে কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকিমূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করে, সেটি তাত্ত্বিকভাবে সুন্দর একটি প্রকল্প। তবে বিগত সরকারের সময়ে এই কার্ড বিতরণ এবং ডিলার নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। বর্তমান সরকার এসব অনিয়মকে চিহ্নিত করতে কাজ করছে।

শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যেভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও অতিথি ছিলেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, টিসিবির জন্য বছরে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেট রয়েছে। টিসিবিকে সরকার সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা শুনে অবাক হবেন, সারা দেশে টিসিবির ১৬টি অফিস রয়েছে; যাতে ড্রাইভার-দারোয়ানসহ সব মিলিয়ে ১৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এই জনবল ও কার্যক্রমের জন্য ১১ হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকার বিষয়টি হাস্যকর।’

শেখ বশিরউদ্দীন জানান, ইতিমধ্যে এক কোটি পরিবারের কার্ডের মধ্যে ৫৬ থেকে ৫৭ লাখ কার্ডধারীকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাকি কার্ডগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো কার্ডের পরিবর্তে নতুন স্মার্ট কার্ড আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যক্তিগতভাবে দেখতে যাব, কারা এসব কার্ড গ্রহণ করছেন এবং কারা বিতরণ করছেন। আশা করছি, চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে কার্ড বিতরণে একটা স্থিতি আনতে পারব। রাষ্ট্রীয় অর্থ যেন ইনসাফের সঙ্গে ব্যয় হয়, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।’

বিগত সরকারের সময়ে ‘সাগর চুরি’ করতে গিয়ে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এর হাত থেকে কিছুই বাদ রাখা হয়নি। প্রতিটি জায়গায় গুটিকয় মানুষের একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করা হয়েছিল। কৃষিতে গর্ব করার মতো আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ফলে এখন কৃষি বা অন্যান্য খাতের তথ্যে অসামঞ্জস্যতার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা হয়।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘ইতিমধ্যে অর্থনীতির ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এটি দেড় বছরের জাতীয় আয়কে একত্র করলে তার সমান হয়। গুটিকয় মানুষ অর্থ চুরি করে নিয়ে গেছেন। এটা অবশ্যই নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য অসম্ভব চিন্তার বিষয়।’

 

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তেল বা চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন স্থানীয় আমদানিকারক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন সর্ববৃহৎ লোক দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, যিনি বাজারের একটা বৃহৎ অংশ এবং আট-দশটা ব্যাংকও নিজে ম্যানেজ করতেন। এই যে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ফলে একটা সরবরাহ–ঘাটতি তৈরি হয়েছে, ওই তুলনায় কিন্তু আপনারা বাজারে রিঅ্যাকশন টের পাচ্ছেন না।’

বর্তমান বাস্তবতা মেনে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী রমজানে খেজুর, ছোলা, তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থেকে নিম্নগামী থাকবে বলে আশা করছি। আলুর ক্ষেত্রে আমাদের একটু ব্যর্থতা আছে। তবে আগামী বছর যেন এমন পরিস্থিত না হয়, সে জন্য বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি।’

বর্তমানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী দেশের কিছু গণমাধ্যম প্রচারণা চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ভুল তথ্য শুধু বাইরে থেকে আসছে তা নয়, দেশের সাংবাদিকেরাও অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন। দেশে এখনো দুই ডিজিটের মূল্যস্ফীতি রয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু অনেক জিনিসপত্রের দাম আগের তুলনায় কমছেও। প্রতি রাতে যে টক শো হয়, যে নিউজ হয়, সেখানে কিন্তু এ বিষয়গুলো দেখছি না। এসব ক্ষেত্রে একধরনের সরলীকরণ করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অবশ্যই উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। ডিমের দাম কমিয়ে আনার একমাত্র উপায় হচ্ছে উৎপাদন বাড়ানো। প্রাণিখাদ্যের দাম কমানো গেলে ফার্মের মুরগি ও ডিমের দাম আরও কমবে।

ফসল উৎপাদন ও রপ্তানিতেও বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের মূল্য সংযোজনকারী ফসলের দিকে নজর দিতে হবে।’

শেয়ার করুন