ঢাকার পাঁচটি এলাকায় শুরু হয়েছে কলেরা টিকাদান কর্মসূচি। সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচিতে ঢাকার প্রায় ২৪ লাখ বাসিন্দাকে মুখে খাওয়ার এ টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। আজ ২৬ জুন (রবিবার) শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে ২ জুলাই পর্যন্ত। বিকেলে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রথম ডোজ কলেরা টিকাদান কর্মসূচি চলবে।
যাত্রাবাড়ীর প্রায় পাঁচ লাখ, সবুজবাগের প্রায় চার লাখ ২০ হাজার, দক্ষিণখানের প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার, মিরপুরের প্রায় সাত লাখ ৮০ হাজার ও মোহাম্মদপুরের প্রায় চার লাখ বাসিন্দাকে কলেরার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রায় ৭০০টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
চলমান কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এসব এলাকার অধিবাসীকে কলেরার টিকা গ্রহণ ও টিকাদান কার্যক্রমকে সহায়তা করতে অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর।
জানা গেছে, সাধারণত দেশে এপ্রিল থেকে মে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর বছরে দুই বার ডায়রিয়ার তীব্র প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ বছর ঢাকায় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগীর বসবাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, সবুজবাগ, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকায়।
এ সময়ে কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) শাখার অধীন ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুব দ্রুততার সঙ্গে ইন্টারসেক্টোরাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের (আইসিজি) কাছে প্রতিক্রিয়া-ভিত্তিক (রিঅ্যাক্টিভ) কলেরা টিকাদান কর্মসূচির জন্য টিকার সংস্থান করতে আহ্বান জানায়।
আইসিজি প্রায় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা প্রদানে সম্মত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহায়তায় আইসিডিডিআরবি এ টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
কর্মসূচিতে আরও সহায়তায় রয়েছে জাতীয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও এমএসএফ। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি’র আর্থিক সহায়তায় এই টিকাদান উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে।
কমপক্ষে ১৪ দিন অন্তর দুই ডোজের এই টিকা দেওয়া হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইউবায়োলোজিক্স কোম্পানি লিমিটেডের তৈরি ইউভিকল প্লাস নামের কলেরার টিকা এক বছর থেকে শুরু করে তার বেশি বয়সীদেরকে দেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এই টিকা অন্তঃসত্ত্বা নারী ও যাঁরা ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোন টিকা গ্রহণ করেছেন, তাঁরা বাদে সবাই নিতে পারবেন। টিকা নেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোন টিকা নেওয়া যাবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডঃ মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও ডঃ তাহমিদ আহমেদ। ডঃ ফেরদৌসী কাদরী টিকাদান কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, যেমন—নিরাপদ পানির ব্যবহার, নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।