বর্ষা মৌসুম শুরুর ঠিক আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশের অংশে অপেক্ষাকৃত বড় বাঁধের পুনর্নির্মাণ হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়া বিধানসভা আসনের সিপিআইএম (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্ক্সবাদী) বিধায়ক দীপঙ্কর সেন বাংলাদেশের অর্থে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠির ভিত্তিতে গত রোববার ত্রিপুরা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকেরা সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।
ওই অঞ্চল পরিদর্শনের বিষয়ে গতকাল সোমবার টেলিফোনে প্রথম আলোকে বিধায়ক দীপঙ্কর সেন বলেন, বিলোনিয়ার উল্টো দিকে, অর্থাৎ বাংলাদেশ অংশে একটি বাঁধ পুর্নর্নিমিত হচ্ছে। বিলোনিয়ার উত্তর অংশের জল বাংলাদেশের কালিকাপুর দিয়ে ঢোকে। এই জল যাতে দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে যেতে না পারে, সে জন্য আগেই একটি বাঁধ বাংলাদেশ নির্মাণ করেছিল। তবে প্রতি বর্ষায় এই বাঁধ ভেঙে যায় বলে নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এবার বাঁধটি অনেক শক্তপোক্ত করা হচ্ছে। উচ্চতাও আগের বাঁধের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
দীপঙ্কর সেনের দাবি, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, সম্ভবত এত উচ্চতায় বাঁধ করা যায় না। দ্বিতীয়ত, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে নির্মাণ করা যায় না। আমি ওই অঞ্চলে গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উত্তর বিলোনিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন দীপঙ্কর সেন। তিনি বলেন, এসব অঞ্চলের মানুষ তাঁকে বলেছেন, ওই অঞ্চল থেকে খাল কেটে জল অন্য নদীতে ফেলে তা শহরের বাইরে নেওয়া সম্ভব। তবে সরকার কী করবে, সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি তিনি।
দীপঙ্কর বলেন, ‘আমি জানিয়েছি, এখন দেখা যাক কী হয়।’
সরকারি হিসাবমতে, গত বছরের বন্যায় ত্রিপুরার বিভিন্ন অঞ্চলের ১৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল ৩৮ জনের। বিষয়টি মাথায় রেখে ত্রিপুরার পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের সচিব কিরণ গীত্বর নেতৃত্বে একটি সরকারি দল গত রোববার ঘটনাস্থলে যায়।
গীত্বকে উদ্ধৃত করে ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে, ‘রাজ্যে গত বছর অবিশ্বাস্য বন্যা হয়েছিল। প্রচুর ছোট বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অথবা ভেঙে পড়েছিল। সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছিল দক্ষিণ ত্রিপুরায়, যা মেরামতের কাজ এখনো চলছে। যাবতীয় মেরামতকাজ আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।’
গীত্ব আরও বলেছেন, যেহেতু বেলোনিয়া সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাই সেখানে পাঁচজন প্রকৌশলীকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে গীত্ব কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে বিলোনিয়া পৌরসভার প্রধান নিখিল চন্দ্র গোপ বলেন, বিলোনিয়া শহরকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ভারতের অংশে বাঁধের উচ্চতা এক থেকে দুই মিটার বাড়ানো প্রয়োজন।
দীপঙ্কর সেন বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় ৩০-৩৫টি ঘর ধসে পড়েছিল। এবার যাতে সেটা না হয়, সে জন্য আমি দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার প্রশাসনকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি।’
সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এক গ্রামবাসীকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা বলেছে, গ্রামের মানুষ মনে করছেন, বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে তাঁরা আগেই স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের অংশে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পর সরকারের টনক নড়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে উত্তর ত্রিপুরার উনকোটি জেলার বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাকে চিঠি লিখে জানান, বাংলাদেশ অংশে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে তাঁর জেলাকে সমস্যায় ফেলবে।
প্রথম আলোর ফেনী সংবাদদাতা জানান, গত বছরের আগস্টে বন্যায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ত্রিপুরার বিলোনিয়া ও ফেনীর বল্লামুখার বেড়িবাঁধের ৩ পয়েন্টে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে উজানের পানিতে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এসব জেলায় ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৫০ লাখের বেশি মানুষ। আর বন্যায় সবচেয়ে মারা গেছে ফেনীতে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ফেনীর পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের নিজ কালিকাপুর সীমান্ত এলাকায় বল্লামুখা বাঁধ পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। এখন বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৩৯০ মিটার জায়গায় সংস্কারকাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। বিজিবির তত্ত্বাবধানে বাঁধের সংস্কারকাজ চলমান।