উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য বাজারের সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।
আজ সংসদে দেওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি বাংলাদেশে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির একটি প্রধান কারণ। তবে আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অবচিতি (মান কমে যাওয়া)। ২০২১-২২ অর্থবছরে করোনা অতিমারির প্রকোপ কমে এলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ওই বছরে বাণিজ্যঘাটতি ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি হয়।’
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসের শেষে ছিল ৩৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের মে মাসের শেষে কমে হয়েছে ২৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই হতে এ পর্যন্ত রিজার্ভ হতে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়তে হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ মান কমেছে, যার ফলে আমদানি করা পণ্যের মূল্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এভাবে আমদানিজনিত মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর।’
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে অন্যান্য দেশ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সুদের হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি ১০ শতাংশে ও নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি ৭ শতাংশে উন্নীত করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলভিত্তিক সুদের হার নির্ধারণের ব্যবস্থা (স্মার্ট) বিলোপ করে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগান সাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদ হার নির্ধারিত হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য এর পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।’
দেশে ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর। গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।