মেট্রোরেলে টিকিট থেকে আয় ২৪৪ কোটি টাকা, মে থেকে ট্রেনের সংখ্যা বাড়তে পারে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 05-02-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

আগামী মে থেকে শুক্রবারও সারা দিন মেট্রোরেল পরিচালনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে যে বিরতিতে মেট্রোরেল চলছে, তা কমিয়ে আনার চিন্তাও আছে। এতে দৈনিক ট্রেন চলাচলের সংখ্যা বাড়বে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেলের টিকিট বিক্রি করে আয় হয়েছে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা।

রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোডের (আরআরআর) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুর রউফ। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে ওই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।

বর্তমানে শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে মেট্রোরেল চলাচল করে। অন্যান্য দিন ব্যস্ত সময়ে পিক আওয়ারে ৮ মিনিট এবং কম ব্যস্ত সময়ে (অফ পিক আওয়ারে) ১০ মিনিট পরপর উভয় দিক থেকে মেট্রোরেল চলছে। সব মিলিয়ে খোলার দিনগুলোতে সারা দিনে ১৯৮ বার যাতায়াত করে মেট্রোরেল। শুক্রবার চলে ৬০ বার।

 

 

ডিএমটিসিএলের এমডি আবদুর রউফ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মেট্রোরেলের ফ্রিকোয়েন্সি মে মাসের মধ্যে সহনীয় মাত্রায় আনা যায় কি না। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশনা রয়েছে। মে মাসকে আমরা টার্গেট করেছি। আশা করছি মে মাসের মধ্যে গুছিয়ে ফেলতে পারব।’

বর্তমানে মেট্রোরেলে গড়ে সাড়ে তিন লাখ যাত্রী পরিবহন করে বলে জানান ডিএমটিসিএলের এমডি। তিনি জানান, গতকাল সোমবার মেট্রোরেলে সর্বাধিক প্রায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করেছে। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি ৩ লাখ ৮১ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করে। মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দৈনিক যাত্রী চলাচল সাড়ে পাঁচ লাখ হবে বলে তিনি জানান।

 

গত বছর আয় ২৪৪ কোটি টাকা

২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেলের যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল এমডি। তিনি জানান, ২০২২ সালে আংশিক চালুর পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২২ কোটি টাকার বেশি।

মেট্রোরেল পরিচালনায় খরচের বিষয়ে ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. আফতাবুজ্জামান জানান, মেট্রোরেল পরিচালনায় মাসে গড়ে ছয় কোটি টাকার মতো বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। আরও প্রায় ছয় কোটি টাকার মতো খরচ হয় বেতন-ভাতার পেছনে। এর বাইরে মেরামত, স্টেশনারি কেনাকাটা রয়েছে। কিছু কর্মকর্তার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয় প্রকল্পের অধীনে।

ডিএমটিসিএলের এমডি আবদুর রউফ জানান, মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণের কিস্তি ও সুদ তিন কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। এ খাতের প্রায় ৭৬ কোটি টাকা মেট্রোরেলের আয় থেকে পরিশোধ করা হয়েছে।

গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০–এর স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাথমিকভাবে অন্য স্টেশন ও স্থাপনা থেকে কিছু যন্ত্রপাতি স্থানান্তর এবং স্থানীয়ভাবে কিছু পণ্য কিনে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করে দুটি স্টেশন চালু করা হয়। ডিএমটিসিএলের এমডি জানান, অন্য স্থান থেকে যেসব যন্ত্র ও সামগ্রী নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর আরও কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ কাজে সাকল্য ১৮ কোটি টাকা লাগবে।

অবশ্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বলা হয়েছিল, মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত দুই স্টেশন চালু করতে এক বছর লাগবে। ব্যয় হতে পারে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা।

পোস্টার না লাগানোর আহ্বান

ডিএমটিসিএলের এমডি ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মেট্রোরেলের পিলারে গ্রাফিতি হতে পারে। কিন্তু এখন অনেকেই পোস্টার লাগাচ্ছেন। ঢাকা শহরের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সিটি করপোরেশন ও পুলিশকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মেট্রোরেলে জনবলসংকট আছে জানিয়ে এমডি আবদুর রউফ বলেন, এ পর্যন্ত ২০০–এর মতো ব্যক্তি নিয়োগ পেয়ে এবং প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি অন্তত ৫০ জন চাকরি ছেড়েছেন। তাঁরা ভালো চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, ডিএমটিসিএলের অনুমোদিত লোকবল ১ হাজার ৯১৯। কর্মরত আছেন ১ হাজার ৩৭৯ জন। জনবল কাঠামো আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগপ্রক্রিয়াও চলমান। শিগগিরই ২০০ নতুন লোক যোগ দেবেন। আরও কিছু লোকবল অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হবে। তাহলে ট্রেনের সংখ্যা এবং সেবা আরও বাড়ানো যাবে।

 

এমআরটি লাইন-৬–এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান ও এ বি এম আরিফুর রহমান উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে থাকা মেরামত কারখানা এবং নানা স্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাঁরা মেট্রোরেলের কারিগরি নানা দিক এবং যাত্রীবান্ধব উদ্যোগ সম্পর্কেও অবহিত করেন।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এমআরটি লাইন-৬–এর প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া, ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেইন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) আবদুল বাকী মিয়া, এমআরটি লাইন-৫–এর প্রকল্প পরিচালক আফতাব হোসেন খান, ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন প্রমুখ। রিপোর্টাস ফর রেল অ্যান্ড রোডের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. তাওহীদুল ইসলামসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন