সংস্কার না করলে বকশীবাজারের আদালতে সহসা বিচারকাজ সম্ভব না: পিপি
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 09-01-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের এজলাসকক্ষ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে  কোনো সংস্কার না করলে সহসা এখান বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব না।  রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি (পিপি) বোরহান উদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন।

আজ  সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এই অস্থায়ী আদালতে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে এই মামলার শুনানি হয়নি। পিপি বোরহান উদ্দিন আরও বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ আদালত আজ বিকেলে ঘোষণা করবেন।

গতকাল বুধবার রাতে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ভাঙচুর চালানো হয় ও আগুন দেওয়া হয়।

 

আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা

আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার আজ  দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ৩টা ১০ মিনিটে আগুনের খবর পান তাঁরা। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। বাধার মুখে তাঁরা আগুন নেভাতে পারেননি। পরে আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাঁরা আবার যান। গিয়ে দেখেন এজলাস পুড়ে গেছে। পরে তাঁরা ফিরে আসেন।

আজ দুপুরে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ও এরপরে বিভিন্ন সময় বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তবে গতকাল রাত কিংবা আজকের সকালে আগুন লাগার কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।  

অস্থায়ী বিশেষ আদালত সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে সড়ক অবরোধ করেন আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ১০ ঘণ্টা পর আজ বেলা ১১টার দিকে তাঁরা সড়ক থেকে সরে যান।

 

পুড়িয়ে দেওয়া অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ছবি তুলছেন এক ব্যক্তি। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা

পুড়িয়ে দেওয়া অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ছবি তুলছেন এক ব্যক্তি। 

আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালত বসানোর প্রতিবাদ করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এই আদালত সরিয়ে নেওয়ার দাবি করছেন।

১৫ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। বর্তমানে এই বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।

পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা

অস্থায়ী বিশেষ আদালতের এজলাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। 

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে হওয়া মামলায় দণ্ডিত সাবেক বিডিআর সদস্যদের কারামুক্তি, মামলার পুনঃ তদন্ত, ন্যায়বিচার নিশ্চিত, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল-পুনর্বাসনের দাবিতে গতকাল অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য-স্বজনেরা এই কর্মসূচি পালন করেন। আজ তাঁরা শাহবাগ ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন।

সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়েছিল। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তোলা

সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়েছিল। 

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল হোসেন বলেন, বিশেষ আদালতের ফটকে তালা লাগানো ছিল। আজ সকালে ফায়ার সার্ভিস এসে বিশেষ আদালতের কক্ষ থেকে অল্প কিছু ধোয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিতিতে কিছুক্ষণ পর সেই ধোয়া আর দেখা যায়নি।

শেয়ার করুন