টিসিবির ট্রাক থেকে চাল নিলে রান্না হবে লাইলী বেগমের ঘরে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 07-11-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর কালশী এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করেন ষাটোর্ধ্ব লাইলী বেগম। তিন দিন ধরে তাঁর ঘরে রান্না করার মতো চাল নেই। যেসব বাসায় কাজ করেন, সেখান থেকে অল্প পরিমাণে চাল এনে তিন দিন রান্না করে খেয়েছেন তিনি। আজ সকালে সেই চালও শেষ হয়ে গেছে।

এ পরিস্থিতিতে লাইলী বেগম আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কালশী ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান করছেন টিসিবির ট্রাক থেকে চাল কেনার জন্য। সেখান থেকে চাল কিনতে পারলে রান্না হবে লাইলী বেগমের ঘরে।

কালশী এলাকাতেই এক কক্ষের টিনশেডের ছোট্ট বাসায় মা ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন লাইলী বেগম। ওই এলাকায় চারটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে মাসে আট হাজার টাকা আয় হয় তাঁর। সেই টাকা দিয়েই সংসারের সব খরচ চালাতে হয়।

 

যে চারটি বাসায় লাইলী বেগম কাজ করেন, সেখান থেকে প্রায়ই অল্প পরিমাণে সবজি দেওয়া হয় তাঁকে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে রান্না করা তরকারি ও মাছ-মাংসও দেন গৃহকর্ত্রীরা। এর বাইরে কম দামের সবজি ও মাছ, চাল, পিঁয়াজ, রসুন, তেল, ডিম ও লবণের মতো পণ্য কিনেই খেতে হয় তাঁকে। গত দেড় বছরে নিজের টাকায় কোনো মুরগি বা গরুর মাংস কিনতে পারেননি তিনি। ফলে টিসিবি ও ওএমএসের ভর্তুকি মূল্যের পণ্য কিনতে পারলে তাঁর পক্ষে সংসার চালানো সহজ হয়।

লাইলী বেগম বলেন, বাইরের দোকান থেকে চাল ও তেল কেনার সামর্থ্য নেই তাঁর। সে কারণে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সপ্তাহে দু-এক দিন ট্রাক থেকে চাল, ডাল, তেল কেনেন তিনি। কিন্তু সব দিন তো কাজ ফেলে ট্রাকের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষাও করা যায় না।

 

আজ সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হন লাইলী বেগম। এরপর টিসিবির ট্রাক থামতে পারে, এমন সম্ভাব্য একটি স্থানে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে পরিচিতদের কাছে সিরিয়াল রেখে একটি বাসায় কাজে যান। তিন ঘণ্টা পর সেই বাসা থেকে ফিরে এসে দেখেন, ট্রাক তখনো আসেনি। এরপর সেখানে আবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন লাইলী বেগম। তখন পর্যন্ত ট্রাক না আসায় আরেকটি বাসায় কাজে চলে যান তিনি।

লাইলী বেগম বলেন, দুপুরে আবার আসবেন। ততক্ষণে ট্রাক এলে চাল কিনে রান্না করবেন। তা না হলে আরেক বাসা থেকে চাল চেয়ে নিয়ে আজকের মতো চালাতে হবে।
নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকার ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে। এর মধ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রির কর্মসূচি অন্যতম। সম্প্রতি এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে তেল, ডাল ও চাল বিক্রির এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিসিবি। এর বাইরে দেশে এক কোটি পরিবার কার্ডধারীর মধ্যে প্রতি মাসে কিছু পণ্য বিক্রি করে টিসিবি।
টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারছেন। এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম রাখা হয় ১০০ টাকা। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। তবে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে না এলে পরবর্তী সময় কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।
এর বাইরে খোলাবাজারে বা ওএমএস পদ্ধতিতে চাল ও আটা বিক্রি করছে সরকারের খাদ্য অধিদপ্তর। সম্প্রতি ট্রাকে সাশ্রয়ী দামে পিঁয়াজ, ডিম ও আলুসহ কয়েকটি কৃষিপণ্য বিক্রি করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।


 

শেয়ার করুন