প্রধানমন্ত্রীর সাঁড়া জাগানো মানবিক উদ্যোগের ফলে পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় কয়েক দফায় ৩ হাজার ৯০টি ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে দেয়া হচ্ছে জমিসহ ঘর। অত্রাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোকে উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে পাহাড়ে বসবাসরত অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠির গৃহহীন পরিবারগুলোর দারিদ্র বিমোচনে এই গৃহপ্রদান প্রকল্প অনন্য অবদান রাখবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।
মুজিব বর্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা বাস্তবায়নে পরিবার প্রতি ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে একক গৃহনির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দারিদ্র বিমোচনে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহায়ন কর্মসূচীর আওতায় পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাঙামাটি জেলায় বসবাসরত ৩০৯০টি ভূমিহীন হতদরিদ্র পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ণ করছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ তৃণমুল পর্যায় থেকে গত তিন বছরে বাছাই করে পর্যায়ক্রমে এই তালিকা প্রস্তুত করে। ইতোমধ্যেই রাঙামাটির ১০ উপজেলায় ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম পর্যায়ে (১ম ধাপ) ২২৫২টি ঘরহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ গৃহ প্রদান করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ১ম পর্যায়ে রাঙামাটি জেলায় গত ২৩ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে রাঙামাটি সদর উপজেলায় ২৭৬টি, কাউখালী-১০টি, কাপ্তাই-৬৮টি, রাজস্থলী-১৯০টি, বিলাইছড়ি-১০টি, বরকল-১৯টি,জুরাছড়ি-১০টি, বাঘাইছড়ি-৮০টি, লংগদু-৪৫টি এবং নানিয়ারচর-২৮টি’সহ সর্বমোট ৭৩৬টি গৃহ উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
২য় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন তারিখে রাঙামাটি সদরে-১০০টি, কাপ্তাই-০৫টি, রাজস্থলী-৪৯টি, বাঘাইছড়ি-৮০টি, লংগদু-১৫০টি, নানিয়ারচর-৩৩টি, বিলাইছড়ি-২৭টি এবং কাউখালী-৫৯টিসহ মোট ৫০৩ টি গৃহ উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
৩য় পর্যায়ে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল তারিখে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় বরাদ্দকৃত ২৭৮টি গৃহের মধ্যে বাঘাইছড়িতে-৯০টি, লংগদু-১০টি, নানিয়ারচর-১১টি, বরকল-৫৫টি এবং কাউখালী-৪০টি এবং পরবর্তীতে কাপ্তাই-২৬টি, বরকল-০৫টি এবং নানিয়ারচর-০১টিসহ সর্বমোট ২৩৮টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়।
৪র্থ পর্যায়ের (১ম ধাপ) গত ২২ মার্চ (বুধবার) ২০২৩ ইং তারিখে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ৩য় পর্যায়ের লংগদু উপজেলার অবশিষ্ট ৪০টি, ৪র্থ পর্যায়ে ০৮টি, রাঙামাটি সদর উপজেলায় ৮৪টি, বাঘাইছড়িতে ৮০টি, লংগদু(৩য় পর্যায়ের ৪০টি গৃহসহ) ৮৩টি, নানিয়ারচর-২৭টি, বরকল-৪০টি, রাজস্থলী ১৪টি, জুরাছড়িতে ৭০টি এবং কাউখালী উপজেলায় ৪১টি’সহ মোট ৪৩৯টি।
৪র্থ পর্যায়ের (২য় ধাপ) গত ০৯ আগষ্ট ২০২৩ তারিখে রাঙামাটির ০৬ উপজেলার কাপ্তাই উপজেলায় ১১টি, বাঘাইছড়ি-১০০টি, লংগদু’য় ৩২টি, বরকল ২০টি, রাজস্থলীতে ১টি, এবং কাউখালীতে ৪৯টি’সহ মোট ২১৩টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়।
৫ম পর্যায়ের (১ম ধাপ) গত ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় বরাদ্দকৃত ৮৬০টি গৃহের মধ্যে বাঘাইছড়িতে ১০০টি, কাউখালীতে ০৮টি, কাপ্তাইয়ে ১৪টি, রাঙামাটি সদর উপজেলায় ১টি টিসহ সর্বমোট ১২৩টি গৃহ হস্তান্তর করা হয়।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম পর্যায় (১ম ধাপ) এর আনুষ্ঠানিকতার ন্যায় সোমবার (১০ই জুন ২০২৪) ইং তারিখে সোমবার রাঙামাটিতে ৫ম পর্যায়ের ২য় ধাপে নয় উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ০৪টি, কাপ্তাইয়ে ৪০টি, কাউখালীতে ১৩টি, রাজস্থলীতে ২৫টি, বরকলে ৩৫টি, বিলাইছড়িতে ১১টি, বাঘাইছড়িতে ৪২২টি, লংগদুতে ১২৬টি এবং নানিয়ারচর উপজেলায় ০৪টি’সহ মোট ৬৮০টি গৃহ উপকারভোগী পরিবারগুলোর নিকট ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ভাবনার অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ-২ এর অধীনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’- এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে বিশ্বজুড়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। এই গৃহ প্রদান প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এ কার্যক্রমের সুবিধা পাচ্ছে।
এসব পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য উপার্জন ও উৎপাদনশীল সম্পদে তাদের প্রাপ্যতা বাড়াতে এবং নূন্যতম শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টির সংস্থান এ কর্মসূচির মাধ্যমে অর্জিত হওয়া সম্ভব জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, শুধু গৃহায়ণের ফলেই রাঙামাটির দূর্গমাঞ্চলেও কর্মসংস্থান ও উপার্জনের সুযোগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা সর্বমোট ৩০৯০টি। ৫ম পর্যায়ের (২য় ধাপে) উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতকৃত ঘরের সংখ্যা ৬৮০ টি, সোমবার (১০ই জুন-২০২৪) উদ্বোধনের পর ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং পর্যায়ে হস্তান্তরকৃত গৃহের সংখ্যা হবে ২৯৩২টি; তালিকানুসারে অবশিষ্ট ৯৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার বাকি থাকবে। পর্যায়ক্রমে তাদেরকেও গৃহ প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান।