পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান ও নিজের জামাতাকে ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ইতিমধ্যে তাঁকে ইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে গত সোমবার সরিয়ে দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংক পরিচালনায় যাঁদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সাবেক ব্যাংকার আব্দুল জলিল। তাঁকে ইসি চেয়ারম্যান করা হয়। সেই সুযোগে তিনি অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়।
ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক ঋণ বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে। ব্যাংকটির এখন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ অনুমোদন করে ইসি সভা।
যোগাযোগ করা হলে মো. আব্দুল জলিল প্রথম আলোর কাছে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান ও জামাতাকে ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের এমডি করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত ১০ ডিসেম্বর ইসি সভায় ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রস্তাবিত ঋণের অঙ্ক ছিল ২২৫ কোটি টাকা। ঋণ অনুমোদনের দিন সকালে একপ্রকার তড়িঘড়ি করে ইসি চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশে তা বাড়িয়ে ২৫০ কোটি টাকা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ঋণখেলাপি এবং তাদের কাছে ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা অনাদায়ি। এর পরের সভায় ঋণ অনুমোদন নিশ্চিত করে শাখাকে চিঠি দেওয়ার কথা থাকলেও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়নি। অনুমোদনের পরদিনই তড়িঘড়ি করে ঋণ বিতরণ করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সোমবার ইসি চেয়ারম্যানের পদ থেকে আব্দুল জলিলকে সরিয়ে দেয়। তাঁর পরিবর্তে স্বতন্ত্র পরিচালক মুহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাবকে ইসি চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এর আগে তিনি ইসি কমিটির সদস্য ছিলেন।
মো. আব্দুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেটি এই ব্যাংকের পুরনো গ্রাহক। তাদের কারখানা চলমান রাখতে ঋণের প্রয়োজন ছিল। সেজন্য ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। আমি কোনো প্রভাব খাটাইনি।’
আব্দুল জলিল এক সময় ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করতেন। এরপর তিনি ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেডে কাজ করেন।
এদিকে আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে গত মাসে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে মশিউর রহমান নামে একজনকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি করার অভিযোগ উঠেছে। মশিউর রহমান সম্পর্কে আব্দুল জলিলের জামাতা। আব্দুল জলিল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজেরও চেয়ারম্যান।
জামাতাকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন আব্দুল জলিল। বলেন, ‘আমার আত্মীয় হলেও তাঁকে আমি নিয়োগ দেইনি। তিনি ওই পদের জন্য যোগ্য বলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষই তাঁকে সেখানে বসিয়েছে।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তিত হওয়ার পর নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকা বের করে নেয় এস আলম গ্রুপ। গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। শুধু টাকাই নেননি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটিও ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন।