ভিডিওটি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলেই পোস্ট করেছেন। খালি গায়ে হাতে দুটো ডাম্বেল নিয়ে দ্রুত কয়েকটি বুক ডন দিয়ে নিলেন ইয়াসিন চুয়েকো। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে ডাম্বেল দুটো দুই হাতে উঁচিয়ে ধরতেই কয়েক ঘা পড়ল পেটে। তাঁর ট্রেনার ডান হাতে বক্সিংয়ের গ্লাভস পরে দমাদম ঘুষি মারছিলেন পেটে। চুয়েকো সম্ভবত সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। বড় বড় চোখে কয়েকবার ‘না’সূচক মুখভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, ওতে তাঁর হবে না!
ট্রেনার বুঝে ফেললেন কী করতে হবে। কামরার মধ্যে একটু দূরেই শরীরচর্চার আরেকটি বস্তু পরে ছিল। দেখতে একটু লম্বা লাঠির মতোই, গায়ের সঙ্গে আরও কিছু জিনিসপত্র জুড়ে দেওয়া। ট্রেনার গ্লাভস খুলে হাতে তুলে নেন সেই লাঠির মতো বস্তুটি। ততক্ষণে আবারও কয়েকটি বুক ডন দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ডাম্বেল উঁচু করে ধরেছেন চুয়েকো। ট্রেনার সেই লাঠিসদৃশ বস্তু দিয়ে জোরে জোরে মারতে শুরু করেন তাঁর পেটে।
প্রথম আঘাতেই লাঠিটির মাথায় সংযুক্ত কিছু একটা খুলে যায়। কয়েক ঘা মারার পর চুয়েকো আবারও বুক ডন দিয়ে নেন কয়েকটি। এরপর আবারও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। চুয়েকো দুই হাতে ডাম্বেল তুলে ধরে দাঁড়াতেই লাঠির মতো বস্তুটি দিয়ে আবারও তাঁর পেটে মারতে শুরু করেন ট্রেনার। এবারও আরও জোরে। বরাবরের মতোই চুয়েকো মুখে ‘আহ, আহ’ শব্দ করছিলেন, তবে এবার একটি দৃশ্য পাল্টে গেল। চুয়েকো পেট শক্ত করে দাঁড়ানোয় লাঠির মতো বস্তুটি বেশ বেঁকে গেল!
ভিডিওতে পরের দৃশ্যে ট্রেনারের সঙ্গে বক্সিং করতে দেখা গেল চুয়েকোকে। তিনি শুধুই মারছিলেন আর ট্রেনার ঠেকাচ্ছিলেন। পরের অনুশীলনটি আরও কঠিন। একটি রডের মতো লাঠি দুই হাতে ধরে আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকার ভঙ্গিতে ছিলেন চুয়েকো। খুব ভালো ফিটনেস না থাকলে সামান্য একটি লাঠি ধরে ওভাবে শুয়ে থাকাই যেখানে অসম্ভব, চুয়েকো সেখানে অবিশ্বাস্য এক সহনীয়তার পরীক্ষা দিয়ে বসেন। তিনি ওভাবে শুয়ে থাকা অবস্থায় ট্রেনার বড় যানবাহনের টায়ার দিয়ে তাঁর পেটে জোরে জোরে আঘাত করছিলেন। এই অনুশীলন চলছিল সাগরপাড়ে। একই জায়গায় ট্রেনারের সঙ্গে খানিক জুডোও লড়ে নেন চুয়েকো।
ইয়াসিন চুয়েকো? নামটা এত দিনে পরিচিত হয়ে যাওয়ার কথা সম্ভবত। সে জন্যই লেখার শুরুতে তাঁর বর্তমান পরিচয়টি দেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালে তিনি মেসির বডিগার্ড হওয়ার পর রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলেন। তখনই তাঁর বিষয়ে খোঁজখবর শুরু হয়ে, সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে এত দিনে অনেকের তা জেনেও যাওয়ার কথা। তবু কারও অজানা থাকলে চুয়েকোর পরিচয় নতুন করে জানানো যায়। ৩৫ বছর বয়সী চুয়েকো আমেরিকান। আমেরিকান বাবা ও ফরাসি মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া চুয়েকোর উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি।
সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছে, সাবেক মিক্সড মার্শাল আর্টিস্ট চুয়েকো যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর সাবেক নেভি সিলও—আফগানিস্তান ও ইরাকে কাজ করেছেন। তবে মেইল অনলাইন একটি তথ্যে আপত্তি জানিয়েছিল। সেটি হলো নেভি সিলে বর্তমান সদস্যদের কেউ তাঁর নাম শোনেননি এবং নেভি সিল ডাটাবেজেও চুয়েকোর নাম নেই বলে দাবি করেছিল মেইল অনলাইন। সে যাহোক, মেসির এই বডিগার্ডের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিশেষ কিছুই জানা যায়নি। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে মাঝেমধ্যে নিজের ভাইদের সঙ্গে বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি পোস্ট করেন। শরীরচর্চা নিয়েও তিনি পরামর্শ দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তায়কোয়ান্দো এবং বক্সিংয়েও তাঁর দক্ষতা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এর আগে জানিয়েছে, চুয়েকোকে মেসির বডিগার্ড হিসেবে নিয়োগের সুপারিশটা এসেছিল তাঁর ক্লাব ইন্টার মায়ামির সহমালিক ডেভিড বেকহামের কাছ থেকে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে মেসি ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চুয়েকোর ৫০ জনের একটি দল আছে। দিন–রাত মিলিয়ে চুয়েকোকে ২৪ ঘণ্টাই মেসি এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।
মেসি এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকেন চুয়েকোইন্টার মায়ামি এক্স হ্যান্ডল
চুয়েকো কিন্তু বেশ সম্পদশালী। সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, তাঁর ১৫ কোটি ডলারের সম্পদ আছে। মেসির বডিগার্ড হিসেবে তাঁর বার্ষিক বেতন আনুমানিক আড়াই লাখ ডলার। পারিশ্রমিকের বেশির ভাগ অর্থ মায়ামিই দেয়, বাকিটা এমএলএসের স্পনসররা।
মেসি যেখানেই যান, সেখানেই আঠার মতো লেগে থাকেন চুয়েকো। ম্যাচের আগে–পরে তো আছেই, এমনকি শপিং মলেও মেসির সঙ্গে লেগে থাকতে দেখা গেছে তাঁকে। মাঠে কোনো দর্শক দৌড়ে মেসির কাছ পর্যন্ত যেতে চাইলে তাঁকে আগে চুয়েকোকে টপকানোর পরীক্ষা দিতে হয়, যেখানে প্রায় সময়ই তাঁরা সফল হতে পারেন না। চুয়েকো এর আগে হলিউড তারকা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, সেলেনা গোমেজ ও ওয়েন উইলসনের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের লস অ্যাঞ্জেলেসে আসা উপলক্ষে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবেও কাজ করেছেন।
ইয়াসিন চুয়েকোইয়াসিনের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
গত বছরের আগস্টে চুয়েকো একটি ভিডিও পোস্ট করেন নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে। সেখানে দেখা যায়, ট্রেনার লুয়ান আগুয়েরে এলিয়াসের সঙ্গে অনুশীলনে লড়াই করছেন আর সেই লড়াইয়ে একটি লাথি মারতে গিয়ে দেয়ালটাই ভেঙে ফেলেন। বোঝাই যায়, এসব শরীরী সক্ষমতা অর্জনের জন্য চুয়েকোকে খুব কঠোর অনুশীলন করতে হয়, যার দু–একটি উদাহরণ শুরুতেই দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে চুয়েকোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। ‘দ্য অ্যাথলেটিক’–এর ভাষায়, মেসির এই বডিগার্ড আসলে ‘রহস্য–মানব’—স্টেডিয়ামের দর্শকেরাও তাঁকে ‘এনিগমা’ বলে ডাকেন। তবে কেউ যদি চুয়েকোর সঙ্গে দেখা করতে চান, তবে তার একটি সহজ পথও বাতলে দিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি—
মেসিদের ম্যাচে একদৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়ুন। চুয়েকোর সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হবেই।