বান্দরবানে থানচি উপজেলার গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়া প্রকোপ দেখা গিয়েছে। এছাড়াও সাধারন জ্বর, কাশি, বুক ব্যাথা, পেট ব্যাথাসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের বর্ষা মৌসুম শুরু থেকে ঘরে ঘরে দুই একজন করে জ্বরসহ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলে পাঁয়ে হাঁটার পথে দুর্গমতার কারনে উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র চিকিৎসা নিতে না আসলেও দুর্গম এলাকার হাট বাজারে ফার্মেন্সি দোকান গুলিতে জ্বরের ঔষধ ক্রয় ও খেয়ে যাচ্ছে অনেককে ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এনজিও সংস্থা ব্র্যাক গত দুই সপ্তাহ যাবৎ ম্যালেরিয়া পরীক্ষা যন্ত্র ডিভাইজ কীট, অপ্রতুল, ম্যালেরিয়ার ঔষধ অপ্রতুল থাকায় এ রোগের সংক্রামন দেখা যাচ্ছে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র সূত্রে জানা যায়, দুর্গম গ্রাম গুলিতে চলতি বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। তার সাথে ডায়রিয়া ও হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ১০/১২ জন করে ম্যালেরিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। গত ৫ দিনে শিশুসহ ১৭ জন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগ। দুর্গমতা অঞ্চল থেকে অনেকে হাসপাতালে আসছেন না চিকিৎসা নিতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র মিডওয়াইফ নিলুফা ইয়াজমিন জানান, গত ৫ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ১৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ৭ জন বাড়ীতে চলে গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় শিশু ও কিশোর রয়েছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ে এ সময় অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে মশার উপদ্রব বেশী দেখা দেয়। ঘরের আঙ্গিনায় পানি জমা থাকে, ময়লা অবর্জনা জমা থাকলে মশার উপদ্রব বেশী দেখা দেয়। সব সময় মশারী ব্যবহার করার পরামর্শ দিই।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র চিকিৎসাধীন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রেমাক্রী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে শুভাষ চন্দ্র পাড়া নিবাসী প্রদীপ ত্রিপুরা জানান, আমাদের এলাকার ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত আছে। জ্বরে পরীক্ষা করার যন্ত্র নেই, স্বাস্থ্য কর্মীও নেই, আগেতো এনজিও কর্মী ছিল এখন তাও নেই, অনেকে স্থানীয় হাট বাজার থেকে জ্বরের ঔষধ এনে সেবন করে সুস্থ হয়ে যায়। আমি ও অনেক ঔষধ খেয়েছি কিন্তু ভালো না হওয়া আমার ছেলেকে নিয়ে গতকাল থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র এসেছি। চিকিৎসক নার্সরা পরীক্ষা করে দেখি ম্যালেরিয়া জ্বর।
তিনি আরও জানান, দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নের ছোট মদক থেকে থানচি পর্যন্ত আসা যাওয়া ইজ্ঞিন চালিত বোট ভাড়া রোগী হলে রিজার্ভ নিতে হয়। বোট ভাড়া গুনতে হয় ৩ হাজার টাকা।
থানচি সদর ইউনিয়নের চাইঞান পাড়া বাসিন্দা য়ইপুং ম্রো কারবারী ৫৬ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র চিকিৎসাধীন
বলেন, আমাদের পাড়ায় কম বেশী সকল পরিবারের একজন বা দুইজন এ সময়ের জ্বর, কাশি, বুক ব্যাথা, পেটে যন্ত্রনা অনেকের। গতকাল কমপ্লেক্স’র ভর্তি হয়ে চিকিৎসকরা কীট পরীক্ষা জানতে পারলাম ম্যালেরিয়া হয়েছে।
রেমাক্রী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে মেম্বার বিদ্রজয় ত্রিপুরা জানান, গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়া প্রকোপ দেখা দিয়েছে সাথে ডায়রিয়াও, গত বুধবার মেনতাং পাড়া মেনতাং ম্রো কারবারী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমি এ বিষয়ের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।
৭ নং ওয়ার্ডে মেম্বার ইমা চন্দ্র ত্রিপুরা ও একই কথা জানালেন। আক্রান্তদের কিভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় ফার্মেন্সী দোকান থেকে ঔষধ সেবন, স্বাস্থ্য কর্মী, ব্র্যাকের কর্মী থেকে কিছু কিছু সহযোগী নিচ্ছি। তবে জনসংখ্যা ও পাহাড়ী পথে দুর্গমতা কারনে স্বাস্থ্য ও পাড়া কর্মীরা অপ্রতুল।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক মাঠ সংগঠক অর্পন চাকমা জানান, ব্র্যাকের উপজেলা সদর ছাড়া ও বলিপাড়া ইউনিয়নের একটি, রেমাক্রী ইউনিয়নের ২টি মোট তিনটি শাখা অফিস রয়েছে সেখানে মোট ৮ জন কর্মী সর্বাক্ষনিক ম্যালেরিয়া ঔষধ, পরীক্ষা জন্য কীট ডিভাইজ,মশারী সরবরাহ করা হয়। উপজেলা সদরে মোট ৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারী স্বঅবস্থানে রয়েছে আমরা যে কোন সেবা দিতে প্রস্তুত আছি।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র পরিসংখ্যানবিদ কর্মকর্তা পঙ্কোজ বড়ুয়া বলেন,অত্র উপজেলা ছোট বড় ২৪৫ টি গ্রাম রয়েছে, তারমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের তথ্য মতে জনসংখ্যা ২৮ হাজার ৭৫০ জন। দুর্গমতার কারনে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পাঁয়ে হাঁটার পথ পাহাড়ী এলাকা উঁচু নিচু পথ দিয়ে স্বাস্থ্য কর্মী এ সময়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে সেবা করা সম্ভব নয়। তবুও সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: ওয়াহিদুজ্জামান মুুরাদ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র ও ব্র্যাক দুই সংস্থা মধ্যে মশারি, ম্যালেরিয়া পরীক্ষা কীট ডিভাইজ, প্রয়োজনীয় ঔষধ স্বল্প ছিল।
আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছে, পাড়ায় পাড়ায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপের কথা। গতকাল ও পাঠাইয়েছি এবং আরও শক্তিশালী চিকিৎসক টিম, কাল থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ, ডিভাইজ কীট, মশারিসহ চিকিৎসক টিম পাঠানো হবে এবং পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রনের আনার যথা সম্ভব চেষ্টা করা হবে।