পার্বত্য জেলায় আধিপত্য বিস্তারে শসস্ত্র সংগঠন কেএনএফ মাঠে নামছে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 17-04-2022
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

তিন পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবীতে এবার পাহাড়ে ৩ হাজার সদস্য নিয়ে শসস্ত্র সংগঠন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। আগামী বর্ষা মৌসুমে এই সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ের বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, ম্রো ও খিয়াং এই ৬টি সম্প্রদায়কে অনগ্রসর ও শান্ত স্বভাবের সম্প্রদায় হিসাবে গণ্য করা হলেও এবার তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। ৪৭-এর উপ-মহাদেশের বিভক্তি ও ৭১ পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্র আন্দোলনের ফলে পার্বত্য জেলা ছেড়ে ভারতের মিজোরাম, লংত্লাই, লুংলেই ও মামিট জেলায় দেশান্তরি হয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এই সম্প্রদায়ের অনেকে। তাদের অনেকে এখন আর্থিক সহায়তা ও সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে এই কুকি-চিন রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য শসস্ত্র আন্দোলনে নামছে।

আরো জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-খন্ড নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ নামে একটি পৃথক রাজ্যের দাবিতে (কেএনএফ) এবং এর শসস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) মনে করে, পাহাড়ের ৯টি উপজেলা তাদের পূর্ব-পুরুষদের আদিম নিবাস, ব্রিটিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে দখলদাররা অনুপ্রবেশ করে এবং এই ভূমি দখল করে নেয়, ফলে তারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়।

কেএনএফ-এর অভিযোগ, বিভিন্ন মহল তাদের ভূমিতে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। জেএসএস’সহ অন্য সংগঠন গুলো কুকি-চিন জনগোষ্ঠীদের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম সহ নিরীহ মানুষদের ভীতির মধ্যে রেখেছে।

কেএনএফ এর প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জলি মং মার্মা বলেন, কোন শসস্ত্র সংগঠনেই পার্বত্য জেলার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ সংগঠনের সভাপতি নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে। জেএসএস এর ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা মহানগর শাখা ও কেন্দ্রিয় কমিটি’র একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কোয়ারের পাশে এম এন লারমার ভাস্কর্যটির অন্যতম কারিগর ছিলেন। কুকি-চীন জাতীয় ডেভ লপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কুকি-চিনভূক্ত জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নিয়ে ‘দ্য বমজৌ’ বইসহ ৬টি বই প্রকাশ করেন এবং বম সম্প্রদায় থেকে প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সতন্ত্র হিসাবে প্রার্থী হয়েছিলেন।

বম সোস্যাল কাউন্সিল-বাংলাদেশ (বিএসসিবি) সভাপতি লালদুহ সাং বম বলেন, কেএনএফ এর ফলে পাহাড়ে সাম্প্রদায়িকসহ বিভিন্ন সংঘাত বেড়ে যাবে, যা উদ্বেগের বিষয়।

কেএনএফ-এর দাবী মতে, রাঙামাটির সাজেক উপত্যকা বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বান্দরবান উপকন্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের ম্রো অঞ্চল হয়ে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি, লামা ও আলীকদম মোট ৯টি উপজেলা নিয়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত একটি পৃথক রাজ্য সৃষ্টি করা।

সংগঠনটি ২০১৭ সালে কেএনভি নামে সশস্ত্র সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরবর্তীতে মনিপুর রাজ্যের এবং বার্মার কারেন বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে, একই বছরে সংগঠনটির কয়েক শ সদস্যকে মনিপুর রাজ্যে ও পরে শতাধিক সক্রিয় সদস্য কাচিন, কারেন প্রদেশ এবং মনিপুর রাজ্যে প্রশিক্ষণে পাঠায়। ২০১৯ সালে কমান্ডো প্রশিক্ষণ শেষে শসস্ত্র অবস্থায় পার্বত্য জেলায় ফিরে আসে। দেশের রুমা সীমান্ত ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তের জাম্পুই পাহাড়ে একে ৪৭সহ ভারী অস্ত্রে সজ্জিত এ সংগঠনের শসস্ত্র ও নিরস্ত্র মিলিয়ে মোট ৩ হাজারের বেশি সদস্য আছে। খৃষ্টানদের উপর সংখ্যাগুরুদের ধর্মীয় আগ্রাসন ও বিমাতাসূলভ আচরণের জন্যই মূলত এ কেএনএফ সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে পৃথক পূর্ণ-স্বায়ত্তশাসন দাবী করছে।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আকতার বলেন,এই ধরণের সংগঠনের কোন কার্যক্রম আমরা এখনও পায়নি, যদি কোন অপরাধ মূলক কাজ করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
 

শেয়ার করুন