ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মাদ্রাসাছাত্র আবুল হাসান শাহীন (২১)। ঘটনার পর ফেনীতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও গলা থেকে গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। আন্দোলনের তিন মাস পার হলেও আর্থিক সংকটে দরিদ্র পরিবারের এই শিক্ষার্থীর মিলছে না উন্নত চিকিৎসা। নিজের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গলায় গুলি নিয়েও টিউশনি করতে হচ্ছে তাঁকে।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরচান্দিয়া এনায়েত উল্যাহর ছেলে শাহীন ফেনী আলিয়া মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাবা একজন ফল বিক্রেতা। গুলিবিদ্ধ শাহীন চিকিৎসার সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকসহ অনেকের কাছে থেকে ধরনা দিয়েছেন, কিন্তু কোনো সহায়তা পাননি। গলায় গুলি নিয়েই তিনি এবার ফাজিল (স্নাতক সমমানের) প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন।
গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে ছাত্র–জনতার বিক্ষোভে অংশ নেন শাহীন। সেদিনের ঘটনা জানতে চাইলে তাঁর বড় ভাই কেফায়েত উল্যাহ বলেন, আন্দোলন অংশ নিয়ে শাহীন গুলিবিদ্ধ হন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। এলোপাতাড়ি গুলি চালান তাঁরা। সেখানেই একটি গুলি ঢুকে যায় তাঁর গলায়।
জীবনের ঝুঁকি না থাকলেও সারাক্ষণ যন্ত্রণা টের পান শাহীন। তিনি বলেন, ‘গলায় গুলি থাকায় সব সময় যন্ত্রণা হয়। ঘুমাতে গেলে গলার নিচে ব্যথা করে। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। অনেক হাসপাতালে যোগাযোগ করেছি। কোনো হাসপাতালে আমার শরীরে থাকা গুলি বের করার যন্ত্রপাতি নেই। আমি সুস্থ হতে চাই। পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের হাল ধরতে চাই।’
ফেনীতে আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের যে তালিকা করা হয়েছে, তাতে শাহীনের নাম নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে সম্প্রতি তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর ঘটনা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক তাঁকে সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করতে বলেছেন। সিভিল সার্জন অফিসে দুই দিন গিয়ে ফিরে এসেছেন শাহীন। সিভিল সার্জন অফিসে না থাকায় দেখা করতে পারেননি। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সমন্বয়কারী বা জেলার কোনো সমন্বয়কও তাঁর খোঁজ নেননি। মেলেনি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা।
শাহীনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। তবে তাঁর গলার গুলিটি বের করতে পারেননি কেউ। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বেসরকারি কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু টাকার অভাবে শাহীনকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া যায়নি।
শাহীনের বাবা এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমার পাঁচ ছেলের মধ্যে শাহীন তৃতীয়। ফুটপাতে সামান্য ফলের দোকান করে সংসার চালাতে হয়। পরিবারে সবার খাবার জোগাড় করা যেখানে কষ্টকর, সেখানে শাহীনের চিকিৎসা কীভাবে করব বুঝতে পারছি না। তার শরীর থেকে গুলি বের করা প্রয়োজন, কিন্তু এত টাকা কোথায় পাব? ছেলে টিউশনি করে নিজের ওষুধের খরচ কোনোরকমে চালাচ্ছে। কেউ তো কোনো সহায়তা করেনি আমাদের।’
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম বলেন, ‘আমাদের ছাত্র আন্দোলনের তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে। সাড়ে চার শ আহত ব্যক্তিদের একটি খসড়া তালিকা হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই চলছে। সেখানে আহত শাহীনের নাম নেই। তাঁর নামটি যুক্ত করা হবে।’
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জেলায় আহত ও নিহত ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদেরও পর্যায়ক্রমে চিকিৎসাসহ সহায়তা করা হবে। শাহীনের নাম আহত ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করে সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।