আর এক দিন পর কোরবানির ঈদ হলেও রংপুরের হাটগুলোতে গরু বিক্রি কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, ঢাকা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ থেকে গরু কিনতে ব্যবসায়ীরাও কম এসেছেন। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে স্থানীয় মানুষদেরও অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না। আজ দুপুরে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার বুড়ির হাট, পীরগাছার বড়দরগাহ হাট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, রংপুর কৃষিপ্রধান অঞ্চল। আলুসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম কম থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের অনেকে ঘরে এবার কোরবানি হচ্ছে না। ‘ভাগে’ যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের চাহিদাও ছোট বা মাঝারি গরু। বড় গরুর ক্রেতা একেবারে কম।
আজ বেলা ১টার দিকে বুড়িরহাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট ছাড়িয়ে গরু আশআশের রাস্তায় রাখা হয়েছে। বাড়িতে গরু পালনকারীরা গরু নিয়ে আসছেন। দূরদূরান্ত থেকেও গরু নিয়ে এসেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্রেতা কম। হাটে কথা হয় রংপুরের গঙ্গাচড়ার মন্থনার মনিরামপুরের বাসিন্দা বিপ্লব ইসলামের (২২) সঙ্গে। তাঁর বাড়িতে ৫টি গরুর মধ্যে ২টি বুড়িরহাটে নিয়ে এসেছেন। বিপ্লব বলেন, ‘গরুর বাজার ঠান্ডা। হাটে হাটে ঘুরছি। গরুর দাম কম কওছে। এক ষাঁড় বড় করতে এক বছর নাগে। ভুসি, খইল, ঘাস—এমনকি লতাপাতাও টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। দাম কম হলে গরু পুষি কী হবে।’
হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে মনের আনন্দে ফিরছেন কয়েকজন। আজ রংপুর নগরের বুড়িরহাট সড়কে
রংপুর সদরের গঞ্জিপুরের বাসিন্দা একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু বেচতে এসেছেন। তিনি বললেন, গতকাল বুধবার বেতগাড়ী হাটে গরুটি দাম উঠেছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু আজ ২ লাখের বেশি বলছে না। চাঁদপুরের ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন কোরবানির ঈদের সময় উত্তরাঞ্চল থেকে গরু কেনে ঢাকায় পাঠান। তিনি বলছিলেন, এবার ঢাকাতে চাহিতা কম। তিনি কিছু গরু পাঠিয়েছেন। বড় গরু আছে ৭-৮টি। সেগুলো স্থানীয় হাটগুলোতে বেচার চেষ্টা করছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর রংপুরে কোরবানির প্রাণী প্রস্তুত আছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার। চাহিদা ২ লাখ ২৪ হাজার। উদ্বৃত্ত থাকবে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি প্রাণী।
ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। সাধারণ কৃষক কৃষিপণ্যের বাজার পাননি। বিশেষ করে আলুর দাম কম হওয়ায় অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থায় আছেন রংপুরের হাজার হাজার আলুচাষি ও ব্যবসায়ী। এর প্রভাব পড়েছে কোরবানিতে।