উত্তরাঞ্চলের সবজি, ফুলসহ কৃষিপণ্য ঢাকায় নেওয়ার জন্য ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’ পণ্য ছাড়াই পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলস্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। রেলওয়ে কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেও কৃষি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের কোনো সাড়া পাননি।
ট্রেনটি ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও গাজীপুর হয়ে বিভিন্ন স্টেশনে থেমে রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর কথা আছে। এ সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলস্টেশনের মাস্টার মাসুদ পারভেজ বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো জন্য এবং স্বল্প খরচে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য এই স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছে। তবে প্রথম দিনে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
মাসুদ পারভেজ জানান, তাঁরা সদর উপজেলার বেশ কিছু ব্যবসায়ী ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ট্রাকে করে মালামাল পরিবহনের চেয়ে ট্রেনে নিতে নাকি আড়াই থেকে তিন গুণ খরচ বাড়বে। তাঁদের লোডিং সুবিধাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিশেষ ট্রেনে সাতটি বগি (লাগেজ ভ্যান) আছে। এর মধ্যে একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং অপর ছয়টি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। সবজিচাষি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য অন্তত ২০টি চেয়ার আছে। সবজির সঙ্গে তাঁদের বিনা ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই ট্রেনে প্রতি কেজি কৃষিপণ্যের ভাড়া পঞ্চগড় থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১ টাকা ৫৬ পয়সা। সপ্তাহে এক দিন অর্থাৎ প্রতি বৃহস্পতিবার সকালে পঞ্চগড় থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড়ে উৎপাদিত বেশির ভাগ কৃষিপণ্য খেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে। এমনকি খেতের পাশ থেকেই এসব পণ্য ট্রাকে করে সুবিধামতো ঢাকা, কুমিল্লা, গাজীপুরসহ অন্যান্য জেলার আড়তগুলোতে সরাসরি সরবরাহ করা হচ্ছে। আর ট্রেনে নিতে গেলে এসব কৃষিপণ্য খেত থেকে রেলস্টেশনে নিতে হবে। ট্রেন ঢাকায় পৌঁছালে সেখান থেকে নামানোর পর আবার অন্য গাড়িতে করে আড়তে নিতে হবে। এতে তাঁদের পরিবহন খরচ প্রায় তিন গুণ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া অন্তত চারবার এসব সবজি ওঠানামা করায় তা নষ্ট হবে।
বিশেষ ট্রেনে সাতটি বগি (লাগেজ ভ্যান) আছে। এর মধ্যে একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং অপর ছয়টি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। সবজিচাষি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য অন্তত ২০টি চেয়ার আছে। সবজির সঙ্গে তাঁদের বিনা ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনটি’ যাত্রার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ট্রেনের পরিচালকসহ অন্যরা ট্রেন ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেও কোনো ব্যবসায়ী বা কৃষক কোনো ধরনের পণ্য নিয়ে আসেননি। সকাল ৭টায় পণ্য ছাড়াই ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। ছাড়ার আগে অধিকাংশ বগির (লাগেজ ভ্যানের) দরজাই খোলা হয়নি।
ব্যবসায়ীরা জানান, পঞ্চগড় থেকে সরাসরি ঢাকায় ট্রাকে করে সবজি পাঠাতে প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ তিন টাকা খরচ হয়। তবে ট্রেনে প্রতি কেজির খরচ ১ টাকা ৫৬ পয়সা হলেও স্টেশন পর্যন্ত নিতে তাঁদের পরিবহন খরচ ট্রাকের তুলনায় তিন গুণ বাড়বে। খেত থেকে সবজি রেলস্টেশনে আনতে কুলি ও পরিবহনে কেজিপ্রতি প্রায় দেড় থেকে দুই টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এসব পণ্য নামিয়ে কারওয়ান বাজারে নিতে প্রতি কেজিতে অন্তত তিন টাকা খরচ হবে।
সদর উপজেলা সবজি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, তাঁরা যখন ট্রাকে করে ঢাকায় সবজি পাঠান, তখন তাঁদের বাজার ধরার লক্ষ্য থাকে। রাত তিনটায় একটি গাড়ি কারওয়ান বাজারে পৌঁছাতে পারলে ভোরের বাজার ধরা যায়। এ জন্য পঞ্চগড় থেকে দুপুরের দিকে ট্রাক ছেড়ে দিলে সময়মতো আড়তে পৌঁছাবে। আর ট্রেনে তো সেই সুবিধা নেই। ট্রেনে ওঠানো–নামানো আবার অন্য গাড়িতে তুলে আড়তে নেওয়া। এ জন্য তো আলাদা লোক লাগবে, তাঁর খরচ দিতে হবে। এরপর কিছু সবজি কুমিল্লা বা সিলেটে পাঠানোর ক্ষেত্রে তো আরও খরচ বাড়বে। কিছু মালামাল নষ্টও হতে পারে। এ জন্য ট্রেনে মাল (সবজি) পাঠাতে তাঁদের আগ্রহ কম।