পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, ওরফে সন্তু লারমার জন্মদিন আজ। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ সোমবার পার্বত্য চট্টগ্রামের এক সময়ের গেরিলা নেতা আজ আশি বছরে পা দিলেন। তাঁর জন্মদিনে দেশের বিশিষ্টজনরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বরাবরের মতো অনাড়ম্বরভাবেই এদিন উদ্যাপিত হবে। তাঁর দল জনসংহতি সমিতিরও এ উপলক্ষে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।
জ্যোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) ১৯৪২ সালে রাঙামাটির নান্যেচর উপজেলার বুড়িঘাট মৌজার মহাপুরম গ্রামে জন্ম নেন। বাবার নাম চিত্ত কিশোর চাকমা; মা সুভাষিণী দেওয়ান। চার ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা, তারপর দুই ভাই শুভেন্দু প্রবাস লারমা এবং মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তাঁদের মধ্যে সবার ছোট সন্তু লারমা।
সন্তু লারমা মহাপুরম জুনিয়র হাইস্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৫৯ সালে। চট্টগ্রামের স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে তিনি ১৯৬১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৩ সালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ পাস করেন। শিক্ষাকতা দিয়ে শুরু করেন তাঁর পেশাগত জীবন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন মাইসছড়ি জুনিয়র হাইস্কুল, গুইমারা জুনিয়র হাইস্কুল ও দীঘিনালা হাইস্কুলে। চাকরি জীবনেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শিক্ষক সমিতি গঠন করেন এবং তিনি ছিলেন এর সভাপতি।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সন্তু লারমা। ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে পাহাড়ি ছাত্র সমিতি গঠনে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমাজকল্যাণ সমিতি গঠন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ছিলেন। ১৯৭২ সালে গঠিত হয় পার্বত চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)। এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এর মাধ্যমেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লড়াইয়ে সামিল হন। ১৯৭৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পান ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি। সে বছরই জেএসএসের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব নেন। ১৯৮৩ সালে জেএসএসের সভাপতি হন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৯২ সাল থেকে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দেনে এই নেতা। পিসিজেএসএস তথা জুম্ম জনগণের পক্ষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৯ সালের ১২ মে চুক্তির ফলে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হন তিনি। এখনো সেই পদে আছেন। এর পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। সন্তু লারমা ১৯৬৪ সালে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী শিপ্রা দেওয়ান অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। তাঁদের দুই মেয়ে আছে।