মুসলিম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট। আগামী ১০ জুলাই দেশের মুসলিম জাতি উদযাপন করবে পবিত্র ঈদুল আযহা।
এ বছর করোনা সংক্রমনের বছর গুলোর ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে খামারী ও কৃষকরা। দেশে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সংক্রমণ এড়াতে মাক্স পরে হাটে যেতে দেখা যায়নি কাউকে। হাটের প্রবেশদ্বারে হাত ধোয়ার কোন ব্যাবস্থা ও চোখে পড়েনি। এছাড়াও হাটে ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও অনেক দর্শনার্থীর ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
আজ ২ জুলাই (শনিবার) মাটিরাঙ্গা বাজার গুরে দেখা যায়, ১০/১৫ টি বড় জাতের গরু নির্দিষ্ট খুটিতে বাঁধা। মাঝারী ও ছোট আকারের অনেক গরু বাজারে আনেন কৃষকরা। উপজেলায় ছোট ছোট কয়েকটা খামার রয়েছে। বাকী গরুগুলো সবই গ্রহস্থের। এদের দাম আকার অনুযায়ী ৪ লাখ থেকে শুরু হয়ে মাঝারী আকারের গরুর দাম হাকা হচ্ছে ৯০ থেকে ১ লাখ। বড় আকারের একটি খাসি ২০/২৫ হাজার টাকা দাম হাকাচ্ছেন খাসির মালিকরা।
এদিকে বেপারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু ক্রয় করে থাকেন। একই সাথে এসব পশু বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। তবে অনেকে বাড়তি আয় করার জন্য গরু মোটাতাজাকরণ ঔষধ ব্যাবহার করে থাকেন।
মাটিরাঙ্গা বাজারে সাপ্তাহের প্রতি শনিবার গরু-ছাগলের হাট বসে। হাটের নির্দিষ্টস্থানে স্থান সংকুলানের অভাবে মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কোরবানির আগ পর্যন্ত হাট বসবে মর্মে ঘোষণা দেয়া হলে ত্রেতা-বিক্রেতাগণ ওই স্থানে ভীড় জমায়। তবে উপজেলার গোমতী ও মাটিরাঙ্গাকে সবচেয়ে বড় পশুর হাট বলে ধারণা করেন অনেকে। এসব হাটে দেশীয় প্রজাতির গরু ও ছাগলের আধিক্য বেশী থাকায় সকলে এ দুই প্রজাতির পশু দিয়েই কোরবানি করে থাকেন।
মাটিরাঙ্গা সদর সহ অত্র উপজেলার খেদাছড়া, বেলছড়ি, গোমতী, শান্তিপুর, রামশিরা, বোর্ডঅফিস, ডাকবাংলা, তবলছড়ি ও তাইন্দং বাজারে নিজেদের সুবিধাজনক দিনে কোরবানির পশুর হাট বসে। স্থানীয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু ব্যাবসায়ী ও কোরবানিদাতা গণ এসব বাজার থেকে গরু, ছাগল ক্রয় করে থাকেন। দেশী গরুর কদর বেশী হওয়ায় এসব স্থান থেকে পশু ক্রয় বিক্রয়ে আগ্রহ বেশী অনেকের।
গত বছরের তুলনায় এ বছরের কোরবানির চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। নিজেদের আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকে কোরবানি দিতে পারছেন না। নিত্যপণ্যের দাম বেশী হবার দরুন কোরবানিদাতার সংখ্যা কমে থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি বাজারে ৫টি মেডিকেল টিম কাজ করবে, তারা সুস্থ্য ও অসুস্থ পশু চিহ্নিতকরনের কাজে সকলকে সহযোগীতা করবে। এবার প্রায় দুই হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ বছর কোরবানিদাতার সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমবেশি হতে পারে।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী রহমান মোল্ল্যা বলেন, এ বছর অনেক গরু ছাগলের সমগম হলেও গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম বেশী, ক্রেতার সংখ্যা ও রয়েছে বেশ। গো-খাদ্যের দাম বেশি বিধায় পশুর দাম বেশি।
কুমিল্লা থেকে গরু ক্রয় করতে আসা আমজাদ মিয়া জানান, আমরা সব সময় এ উপজেলার বিভিন্ন হাট থেকে নিজের এবং আত্মীয় স্বজনদের জন্য গরু ক্রয় করে থাকি। গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি বলে মনে হলেও আমরা নিজেদের চাহিদা মোতাবেক গরু ক্রয় করবো।
বর্তমানে অনলাইনে পশু ক্রয় বিক্রয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও ক্রেতা কমছে না। একদিকে কিছু মানুষ যেমন কোরবানি করার আগ্রহ হারাচ্ছে অন্যদিকে কোরবানি দেবার সামর্থ্য হচ্ছে অনেকের।
এই ব্যাপারে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আরিফ উদ্দিন জানান, গত ৫ বছর ধরে যথেষ্ট পরিমাণে কোরবানি করার মতো উপযুক্ত পশু রয়েছে। এছাড়াও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার বাহিরে পশু সরবরাহ করার মতো যতেষ্ট পশু রয়েছে বলেও জানান তিনি।