নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেই সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে মনোনয়নপত্র যাছাই–বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ।
রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মানি লন্ডারিং ও দুদকের মামলায় সাজা হওয়ার কারণে বাছাইয়ে সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া চার প্রার্থী হলেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য বীরপ্রতীক গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মর্তুজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাবিবুল কাদের তমাল ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আবু হোসেন ভূঁইয়া (রানু)।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী বিমান থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তাঁর বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে দেশি–বিদেশি মুদ্রা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছিল, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো বা অনলাইন জুয়ার মূল হোতা। তিনি প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
সে সময় তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে প্রথম অনলাইন ক্যাসিনো চালু করেন। তিনি গুলশান ও বনানীতে পি ২৪ এবং টি ২১ অনলাইন নামে অনলাইনে ভিডিও গেম খেলার প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পরে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সেগুলোকে অনলাইন ক্যাসিনোয় রূপান্তর করেন। ওই অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান কেন্দ্র ছিল ফিলিপাইনে। সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ছাড়াও ঢাকার গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা হয়। বিচারাধীন এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি।
২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল দুদকের করা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। তাতে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দুই ধারায় সেলিম প্রধানকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। ইতিমধ্যে তাঁর সাজাভোগ শেষ হওয়ায় এবং বাকি মামলায় জামিন পাওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে মুক্তি পান তিনি। সাজার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে যে আপিল করেছেন, সেটা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির দুই বছরের বেশি দণ্ড ও সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সাজা স্থগিত থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না; যদি সাজা উপযুক্ত আদালতে বাতিল না হয়।
আগামী ২১ মে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।