গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে—সম্প্রতি সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এমন প্রস্তাব রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তৈরি করেছে। এই আলোচনার মধ্যে গত শনিবার দুপুরে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার, এ বিষয়ে কোনো জাতীয় ঐক্য হয়তো হবে না।’ তবে সালাহ উদ্দিন আহমদের এই কথাকে এ ব্যাপারে দলটির শেষ কথা বলে মনে করছে না এনসিপি।
নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে এখনো অটল অবস্থানে আছে এনসিপি। অবশ্য তরুণদের নতুন এই দলটির নেতারা এখন বলছেন, একসঙ্গে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারণাটি তাঁরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এনসিপি এখন নতুন একটি চিন্তা সামনে আনতে চাইছে। তারা বলছে, গণপরিষদ নির্বাচনে যাঁরা জিতে আসবেন, সংবিধান প্রণয়নের পর গণপরিষদ আইনসভায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে। গণপরিষদের সদস্যরা আইনসভা তথা সংসদের সদস্য হয়ে যাবেন। এমনটা হলে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। নেতাদের ৪ মার্চ জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ঢাকার রায়েরবাজারে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিন রায়েরবাজারে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে সহায়তা করবে। গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। এর মাধ্যমেই নতুন কাঠামো ও নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’ এরপর ৬ মার্চ রয়টার্সে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ বলেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। তিনি মনে করেন, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে সহায়তা করবে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলেছিলেনছবি: এএফপি
নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে গত শনিবার খেলাফত মজলিসের ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার, এখানে (একসঙ্গে গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন) কোনো জাতীয় ঐক্য, এ বিষয়ে হয়তো হবে না, একটি মেজর পলিটিক্যাল পার্টির সদস্য হিসেবে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনই হবে সবচেয়ে জরুরি এবং আমাদের অগ্রাধিকার।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব নাকচ করেছেনফাইল ছবি
সালাহ উদ্দিন আহমদ সেখানে রয়টার্সে নাহিদের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করেন।
এনসিপির এখন কী চিন্তা
দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ কার্যত নাহিদ ইসলামের প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তরুণদের নতুন দল এনসিপি কী ভাবছে, তা জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমদ বিষয়টি যেভাবে দেখেছেন, এটি সে রকম নয়। সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য গণপরিষদ প্রয়োজন।এটি এনসিপির প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনফাইল ছবি
সামান্তা বলেন, ‘আমরা ধরে নিতে পারি, এককভাবে গণপরিষদের ব্যাপারে তাদের (বিএনপির) আপত্তি নেই। গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে করতে গেলে তাদের আপত্তি। আমরা এই দুই নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলিনি। আমরা বলেছি, গণপরিষদ নির্বাচনে যাঁরা জিতে আসবেন, সংবিধান প্রণয়নের পর তাঁরাই আইনসভায় রূপান্তরিত হয়ে যাবেন। এটি হলে এখানে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যাই হবে না।’
তাহলে নাহিদ ইসলাম কেন একসঙ্গে গণপরিষদ ও জাতীয় নির্বাচনের কথা বললেন, এই প্রশ্নের জবাবে সামান্তা বলেন, ‘আমরা সম্ভবত বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। এই অবস্থানে আমরা কখনোই ছিলাম না। বাংলাদেশে যেহেতু নির্বাচনকে প্রথাগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলা হয় এবং মানুষ এর সঙ্গেই পরিচিত, এ জন্যই এটা এভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু মূলত আমরা বলতে চেয়েছি, গণপরিষদই আইনসভায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে।’
অবশ্য সালাহ উদ্দিন আহমদের বক্তব্য বিএনপির দলীয় অবস্থান কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে এনসিপির। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেত্রী সামান্তা শারমিন বলেন, ‘তাঁরা (সালাহ উদ্দিন) ঐকমত্য পোষণ না করার কথা এভাবে বলে দিতে পারছেন, এমন রিজিড অবস্থানে চলে যাওয়া আসলে তাদের পার্টি লাইন কি না, এ ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারছি না। অতীতে তাঁদের দলের বক্তব্য পরিবর্তনের নজির আছে। এ ক্ষেত্রেও এটা হবে কি না, তাঁদের কোনো একজন নেতা আবার নমনীয় অবস্থানে থাকবেন কি না, এটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। একেবারেই ঐকমত্য সম্ভব নয় বলে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, এটা রাজনৈতিকভাবে কঠোর অবস্থানে চলে যাওয়া। এই কঠোর অবস্থানটা বিশেষত প্রবলেমেটিক (সমস্যাজনক), যখন আমরা দেখি এখানে সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’