আরাভকে ফেরাতে দরকার তিন দেশের বোঝাপড়া
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 26-03-2023
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান এখন আন্তর্জাতিকভাবে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি। গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ ইস্যু করেছে। এর ফলে আরাভ খানের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ এক ধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরাভ খানের দেশে ফেরানো নির্ভর করছে বাংলাদেশ, ভারত ও দুবাই সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক বা বোঝাপড়ার ওপর। তাকে দেশে ফেরাতে ভারতীয় পাসপোর্টও বাতিল করতে হবে। দুবাই সরকার আরাভ খানকে বাংলাদেশের কাছে দিতে রাজি হলে তাকে সেখানে গ্রেপ্তার করতে হবে। এরপর বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে ইস্যু করা ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে দেশে ফেরানো যাবে এই অপরাধীকে। বর্তমানে আরাভ খান দুবাই সরকারের নজরদারিতে রয়েছেন।

 

শুধু আরাভ নয়, ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় থাকা আরও দুই বাংলাদেশি দুবাইয়ে পলাতক জীবনযাপন করছেন। এরা হলেন- মালিবাগের হোটেল সানরাইজে দুই পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ও ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ জিসান এবং আতাউর রহমান মাহমুদ চৌধুরী। দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ ঝুলে থাকলেও ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ। কয়েকবার তাদের ফিরিয়ে আনতে তোড়জোড় করা হলেও শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে। ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই যাওয়া আরাভ খানকেও দেশে ফেরানো জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

গতকাল শুক্রবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটের রেড নোটিশের তালিকায় আরাভ খানের নাম লেখা রয়েছে রবিউল ইসলাম ওরফে রবিউল। এতে তার ছবি, লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্মতারিখ, বয়স, জাতীয়তা ও অভিযোগের তথ্য রয়েছে। রেড নোটিশে রবিউলের জাতীয়তা লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশি’। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসেবে লেখা আছেÑ ‘হত্যা’। বাংলাদেশের অনুরোধে এই নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, দুবাইয়ে আরাভ গ্রেপ্তার হলে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরানো সম্ভব। যদি তার নামে ইস্যু করা ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল হয়, তাহলে ফেরানোর প্রক্রিয়া সহজ হবে।

 

আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলাতক যে কোনো আসামিকে কূটনৈতিক ও পুশব্যাকের (কোনো দেশ নিজেদের উদ্যোগেই যদি ফেরত পাঠায়) মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা যায়। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকলেও অপরাধীকে ফেরানো যায়। তবে চুক্তি থাকলে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে অপরাধীকে ফিরিয়ে আনা তুলনামূলক সহজ। চুক্তি না থাকলে অপরাধী ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতি লাগবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম বাধা দুবাইয়ের বর্তমান নীতি। উদার বাণিজ্য নীতির কারণে দুবাই বিভিন্ন দেশের ধনীদের স্বর্গরাজ্য। আরাভ খানকে ফিরিয়ে দিলে অন্য ব্যবসায়ী এবং অবৈধ অর্থের মালিকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে দুবাই কোনো আসামিকে বাংলাদেশে ফেরত দেয়নি। তাই আরাভ খানকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক মনোভাব নাও দেখাতে পারে। এ ছাড়া তিনি দুবাই গেছেন ভারতের পাসপোর্টে। ভারত যদি আরাভের পাসপোর্টকে বাতিল ঘোষণা করে, তাহলে এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দিতে হবে। এ ছাড়া ভারতে এমন ভুয়া পাসপোর্ট যে তৈরি করা হয়, সেটা প্রকাশ্যে চলে আসবে। এতে করে বিশে^ ভারতের ভাবমূর্তির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আরাভকে ফিরিয়ে আনতে দুবাই ও ভারত কতটুকু সাড়া দেবে, সেটাও কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর নির্ভর করছে।

 

দুবাইয়ের স্থানীয় সূত্র বলছে, দুদিন ধরে আরাভ আত্মগোপনে রয়েছেন। ইন্টারপোল তার ব্যাপারে কার্যক্রম শুরু করেছেÑ এমন খবর প্রচারের পর থেকে প্রকাশ্যে তাকে দেখা যায়নি। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি। গত বুধবারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো স্ট্যাটাসও দেননি তিনি।

 

পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আরাভ ভারতের যে ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং যে কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন, সে বিষয়েও তারা খোঁজখবর নিচ্ছে। আশা করা যায়, শিগগিরই আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পুলিশের চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আরাভ খান নিজের পরিচয় গোপন রেখে কোনোভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। ওই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে যত দ্রুত সম্ভব আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা সূত্রে জানা গেছে, রবিউলের জন্ম বাগেরহাটের চিতলমারীতে মামার বাড়িতে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বাগেরহাট উল্লেখ করা হয়েছে। রেড নোটিশ জারি করতে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো আবেদনে রবিউলের জাতীয় পরিচয়পত্রের বাংলা ও ইংরেজি কপি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। তাই তার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ীই ইন্টারপোলের নোটিশে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জানানো হয়, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান মামলার এজাহারভুক্ত রবিউল ইসলাম নামেই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েছিলেন। ঠিকানা হিসেবে বাগেরহাট জেলাও উল্লেখ করেছিলেন।

 

এনআইডি অনুযায়ী, রবিউল ইসলামের জন্ম ১৯৮৭ সালের ১৯ আগস্ট। পড়ালেখা করেছেন মাধ্যমিক পর্যন্ত। রবিউলের বাবা মতিউর রহমান, মাতা লাখি ও স্ত্রীর নাম রুমা। এনআইডিতে আরাভ খান স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করেছেন বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার কোদলিয়া ইউনিয়নের আড়ুয়াডিহি গ্রাম।

 

 

শেয়ার করুন