আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে নীলফামারীতে হত্যাসহ আরও ৩ মামলা
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 17-09-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে নীলফামারীতে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা হয়েছে। অন্য দুই মামলায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় আসাদুজ্জামান ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।

আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলাটি হয় গত রোববার বিকেলে। ২০১৪ সালে জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানীকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলাটি করেন তাঁর স্ত্রী শাহানাজ বেগম। সদর আমলি প্রথম আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীন কবির মামলাটি সদর থানাকে এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় আসাদুজ্জামান ছাড়াও সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আকতার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হকসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও অন্তত এক হাজার। বাদীপক্ষের আইনজীবী মমতাজ বেগম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, বাদীর স্বামী গোলাম রব্বানী লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালে সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মিথ্যা মামলায় গোলাম রব্বানীকে আসামি করা হয়। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে ওসি বাবুল আকতারসহ অন্য আসামিরা বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্বামীকে না পেয়ে বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় পরিবারের লোকজনকে তুলে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়। জীবন রক্ষায় গোলাম রব্বানী পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি তাঁকে পুলিশ ও র‍্যাব পরিচয়ে তাঁকে তুলে আনা হয়। বিষয়টি জানার পর বাদী স্বামীর খোঁজে আসামিদের কাছে গেলে তাঁরা ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর ১৮ জানুয়ারি সকালে জেলা সদরের নীলফামারী-ডোমার সড়কসংলগ্ন পলাশবাড়ী ইউনিয়নের একটি বাঁশঝাড়ে তাঁর স্বামীর লাশ পাওয়া যায়।

বাদী শাহানাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে রাখা হয়েছিল। তখন আসামিরা অনেক ক্ষমতাধর ছিলেন। পুলিশ, আইন-আদালত সব তাঁদের আয়ত্তে ছিল। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতাম। এখন দেশে আইন-আদালত নিরপেক্ষ হওয়ায় মামলা করেছি।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা সদরের রামগঞ্জ বাজারে সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা হয়। হামলায় আওয়ামী লীগের চার নেতা-কর্মীসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় সদর থানার ওসি (তদন্ত) বাবুল আকতার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন বিএনপির নেতা গোলাম রব্বানী। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে ২০৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, আন্দোলনে হামলার অভিযোগ ৫ ও ১০ সেপ্টেম্বর আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হয়। জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সালাম বাবলা। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আসাদুজ্জামান নূরসহ ১২৬ জনকে আসামি করা হয়।

অন্যদিকে ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দেশি অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, বলপ্রয়োগ এবং ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলার নামে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ চাঁদা দাবির অভিযোগে ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন নীলফামারী বিএম কলেজের ছাত্র ও শহরের পূর্ব কুখাপাড়ার শামীম হোসেনের ছেলে মো. সৌমিক হাসান। মামলায় আসাদুজ্জামান নূরসহ ৬০ জনকে আসামি করা হয়।

তিনটি মামলার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এম আর সাঈদ। তিনি বলেন, সর্বশেষ (রোববার) মামলাটির আদালতের আদেশ পেয়েছেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নথিভুক্তির নির্দেশ আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নথিভুক্ত করা হবে। আগের দুটি মামলা সময়ের মধ্যে নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।


 


 

শেয়ার করুন