ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ এক সপ্তাহের অনুপস্থিতি শেষে আজ বৃহস্পতিবার প্রথম কার্যালয়ে এসেছেন। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে কালো রঙের একটি গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি সভায় অংশ নেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান প্রথম আলোর কাছে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ আজ অনুষ্ঠিত দুটি সভায় অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে ঈদ–পরবর্তী কুশল বিনিময় করেছেন।
ঈদের দুই দিন আগে সর্বশেষ অফিস করেছিলেন লায়লা কানিজ। ছাগল–কাণ্ডের ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। তাঁকে কোথাও দেখা যাচ্ছিল না, মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি তিনি তখন কোথায় ছিলেন, তা-ও কেউ বলতে পারছিলেন না। স্থানীয় সেবাপ্রার্থীরা তাঁর কার্যালয়ে এসে সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি ঠিক কবে থেকে অফিস করবেন, তা-ও জানাতে পারছিলেন না উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তারা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি সভা চলছিল। সভায় প্রবেশের পর নিজের বক্তব্যটুকু দিয়ে তাঁর কক্ষে চলে যান লায়লা কানিজ। এ সময় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তাঁর কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ঈদ–পরবর্তী কুশল বিনিময় করেন।
এ সময় তার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী, চান্দেরকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন খন্দকার, অলিপুরা ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন ভূঁইয়া, শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ মোর্শেদ খান, মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন ভূঁইয়া, মরজাল ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, আমিরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক মোল্লা প্রমুখ।
বেলা পৌনে একটার দিকে আরেকটি মিটিংয়ে অংশ নেন তিনি। আসন্ন বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন সম্পর্কিত ওই প্রস্তুতি সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিংয়েও নিজের বক্তব্যটুকু দিয়ে বেলা ঠিক একটায় বেরিয়ে ওই কালো গাড়িতে চেপে কার্যালয় ত্যাগ করেন লায়লা কানিজ। দুটি মিটিংয়েই সভাপতিত্ব করেন ইউএনও ইকবাল হাসান।
দুপুর একটায় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান রায়পুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ। এ সময় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনিছবি: প্রথম আলো
কার্যালয় থেকে বেরিয়ে চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকেরা লায়লা কানিজকে একের পর এক প্রশ্ন করছিলেন। কোনো জবাব না দিয়ে তিনি ‘আরেকটি মিটিংয়ে অংশ নিতে যাচ্ছেন’ বলে গাড়িতে উঠে পড়েন। এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চান, কখন কথা বলবেন? এ প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
দুই মিটিংয়ে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষক জানান, শুধু নিজের বক্তব্যটুকু দিয়েই মিটিং থেকে বেরিয়ে গেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। অন্যদের বক্তব্য শোনেননি তিনি।
লায়লা কানিজের ব্যবহৃত তিনটি মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর এসব নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে ও হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
লায়লা কানিজ ছিলেন রাজধানীর তিতুমীর সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। শিক্ষকতার পাশাপাশি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ‘ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট’ নামে একটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় স্থানীয় (নরসিংদী-৫ আসন) সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর। এর পর থেকে দিনের পর দিন রাজিউদ্দিন আহমেদ ওই পার্কে অবকাশযাপন করতেন, একপর্যায়ে লায়লা কানিজকে রাজনীতিতে আমন্ত্রণ জানান তিনি। ২০২৩ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সাদেক মারা গেলে লায়লা কানিজ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং সংসদ সদস্যের প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।