বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও আর্থিক সমস্যা মোকাবিলায় সুসমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে চারটি প্রস্তাবও উত্থাপন করেছেন তিনি, যে বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দেওয়া ভাষণে তিনি এ প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে গতকাল ২০ মে (শুক্রবার) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এতে যোগ দেন। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ধার পেতে লড়াই করে চলেছে। এ যুদ্ধ ইতোমধ্যে নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুতর চাপ যুক্ত করেছে। তাই সমস্যা মোকাবিলায় তিনি উন্নত অর্থনীতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে; যেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের স্বল্প সরবরাহ এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের অবিলম্বে এবং লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজন। এ বিষয়ে তিনি উন্নত সব দেশ ও বহুপক্ষীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলার লক্ষ্যে এ গ্রুপটি গঠন করেছেন। বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চারটি প্রস্তাব রেখেছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা প্রথম প্রস্তাবে বলেন, প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সুসমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এই গ্রুপের স্টিয়ারিং কমিটি সব বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠন করায় তিনি খুশি জানিয়ে বলেন, সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ প্রণয়নের জন্য তাদের প্রচেষ্টায় আমাদের পূর্ণ সমর্থন দেব।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবিলা করা প্রয়োজন। আর এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্য ও রপ্তানি আয় পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমর্থনও থাকতে হবে। তিনি বলেন, উন্নত অর্থনীতি এবং বহুপক্ষীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়ন করতে হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে (স্বল্পোন্নত দেশ) অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। তাই এ এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমরা বিদ্যমান উত্তর-দক্ষিণ, দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ট্রায়াঙ্গুলার সহযোগিতার সুবিধা নিতে পারি। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে। পরিশেষে শেখ হাসিনা ৪৮ সদস্যের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করেন, আমরা অনেক এসআইডি এবং নিম্নাঞ্চলীয় জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এসব দেশে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে।
বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ়বিশ্বাসী। আমরা সর্বদা বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। এই গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সেই প্রত্যয় থেকে উদ্ভূত। জাতি হিসেবেও আমরা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জগুলোর বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতার জন্য পরিচিত। কোভিড-১৯ মহামারী তার সর্বশেষ উদাহরণ। মহামারী কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টায় জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার মধ্যে সতর্ক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য সময় মত ব্যবস্থা নেওয়ায় আমাদের একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে এবং জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে।