ক্রিকেটে নাকি টাকার অভাব নেই! অথচ বাংলাদেশের ক্রিকেট আম্পায়ার, স্কোরাররা এত দিন একটু উপেক্ষিতই ছিলেন। বিসিবিতে তাঁদের বেতন কাঠামো বা বেতনের অঙ্ক কোনোটিই সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। অবশেষে গত ২৫ জানুয়ারির সর্বশেষ পরিচালনা পর্ষদের সভায় ফারুক আহমেদের বোর্ড স্থানীয় আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি ও স্কোরারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গঠন করা হয়েছে নতুন বেতন কাঠামোও।
সভায় বিসিবির পে-রোলের আওতাধীন ৩৩ জন চুক্তিভুক্ত আম্পায়ারের বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়েছে। এই আম্পায়ারদের আট শ্রেণিতে রেখে বেতন কাঠামো গঠন করেছে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটি। এ ছাড়া বিসিবির আটজন স্কোরারকেও প্রথমবারের মতো বেতন কাঠামোর আওতায় আনা হয়েছে। এক বছরের চুক্তিতে স্কোরার, আম্পায়ারদের নতুন বেতন কার্যকর ধরা হয়েছে গত ১ জানুয়ারি থেকে। বেতনের বাইরে বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী বছরে ২টি করে বোনাস পাবেন সবাই।
নতুন বেতন কাঠামোতে ‘এ+’ গ্রেডের একমাত্র সদস্য আইসিসির এলিট আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদের বেতন হয়েছে মাসে ২ লাখ টাকা, এত দিন যা ছিল ৬৫ হাজার টাকা। বিসিবির ‘গ্রেড এ’ তে আছেন আইসিসির চার ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলভুক্ত আম্পায়ার মাসুদুর রহমান, গাজী আশরাফুল আফসার সোহেল, তানভীর আহমেদ ও নতুন ঢোকা মোর্শেদ আলী খান। তাঁদের মধ্যে মাসুদুর রহমানের বেতন ৫৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ টাকা, সোহেল ও তানভীরের বেতন ৪৬ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৯০ হাজার টাকা এবং নতুন ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলভুক্ত আম্পায়ার মোর্শেদ আলী খানের বেতন ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
বিপিএলে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন আম্পায়ার গাজী সোহেল
‘গ্রেড বি’তে থাকা চার বিসিবি এলিট প্যানেল আম্পায়ারের বেতন ৪৫ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে। বেতন কাঠামোর ‘সি গ্রেডে’ থাকা আইসিসি প্যানেল আম্পায়ার (ডেভেলপমেন্ট), ইমার্জিং প্যানেল আম্পায়ার ও ফার্স্ট ক্লাস প্যানেলে আম্পায়ারদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ২৫ ও ৩৫ হাজার টাকা। চার নারী আম্পায়ারসহ এই গ্রেডে আছেন ১৯ জন আম্পায়ার। এ ছাড়া রিজিওনাল প্যানেলের পাঁচ আম্পায়ারের বেতন ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করেছে বিসিবি। আগে তাদের কেউ পেতেন ১৫ হাজার টাকা, কেউ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা।
বিসিবির ম্যাচ রেফারিদের মধ্যে ‘গ্রেড এ’–তে আছেন রকিবুল হাসান, নিয়ামুর রশীদ ও আখতার আহমেদ। এর মধ্যে প্রধান ম্যাচ রেফারি রকিবুলের মাসিক বেতন ১ বছরের চুক্তিতে ১ লক্ষ ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ‘গ্রেড এ’–এর বাকি দুজনের বেতন ৫৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ টাকা। ‘গ্রেড বি’–তে আছেন শুধু নতুন নারী ম্যাচ রেফারি সুপ্রিয়া রানী দাস। তিনি পাবেন মাসে ৪৫ হাজার টাকা করে। নিয়ামুর, আখতার ও সুপ্রিয়া—তিনজনই আইসিসি ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলভুক্ত ম্যাচ রেফারি। এ ছাড়া আটজন স্কোরারের বেতন ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
মাঠে বাড়তি অনেক কাজও করতে আম্পায়ারদের
নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমান কাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আম্পায়ারিং ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। আমরা চাই ক্রিকেটের পাশাপাশি এই অংশটারও উন্নতি হোক। যোগ্য, প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েরা এই পেশায় আগ্রহী হোক, পাশাপাশি বর্তমানে যারা আছেন, তারাও আরও ভালো করার জন্য উৎসাহ পান। সে জন্যই সবার বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন, তিনি ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে চান, অর্থের জোগানটাও সেদিকেই বেশি রাখতে চান। আম্পায়ার, স্কোরারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সে লক্ষ্যেরই একটা প্রতিফলন।