কলকাতায় চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় পুলিশ সদস্য দোষী সাব্যস্ত, রায় সোমবার
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 18-01-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। আগামী সোমবার এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

কলকাতার শিয়ালদহের জেলা বিচার বিভাগীয় আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও সওয়াল–জবাব শেষে ওই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ৫ মাস ৯ দিন পর আজ শনিবার কলকাতার একটি আদালতে সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হলেন। বিচারক অনির্বাণ দাস তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পর আসামির কাছে জানতে চান, তিনি দোষী কি না। এ সময় সঞ্জয় রায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এরপর বিচারক জানিয়ে দেন, তিনি তিনটি ধারায় দোষী প্রমাণিত। তাঁর এই অপরাধের শাস্তির রায় ঘোষণা করা হবে আগামী সোমবার।

 

সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ভারতের ন্যায়সংহিতার তিনটি ধারায়। ধর্ষণ ও খুনের ধারায়।

এর আগে এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আজ সকাল থেকে কলকাতা পুলিশ শিয়ালদহ আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করে। আদালতে ঢোকার সব পথ নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আটকে দেওয়া হয়েছে।

আজ শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আর জি কর নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়। যদিও অন্যান্য দোষীর বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের প্রতিবাদে ও দোষীদের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অতিরিক্ত চাজর্শিট দেওয়ার দাবিতে কলকাতার কেন্দ্রস্থল ডরিনা ক্রসিংয়ে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’–এর ডাকে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।

 

চিকিৎসকদের দাবি, আর জি করের নারী চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফরেনসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবেদনে যা উল্লেখ করেছিল, তা প্রমাণিত হয়নি। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাস্থল হাসপাতালের চারতলার সেমিনারকক্ষ বলা হলেও ফরেনসিক বিভাগ তাদের তদন্তে ওখানে ধর্ষণ ও খুনের কোনো আলামত পায়নি। চিকিৎসকেরা আগে থেকেই দাবি করে আসছিলেন, অন্য কোথাও গণধর্ষণ ও খুনের পর মরদেহ সেমিনারকক্ষে এনে রাখা হয়।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন কলকাতার সল্ট লেকের সিজিও কমপ্লেক্স বা সিবিআই দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছে। তারা অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অভিযোগপত্র দেওয়ার দাবি জানায়।

এর আগে চিকিৎসকেরা গত বছরের ৫ থেকে ২১ অক্টোবর কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থান ধর্মঘটে বসেছিলেন। নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর ৯০ দিন কেটে গেলেও আর জি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দ্বীপ ঘোষসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের অভিযোগপত্র না দেওয়ায় জামিন পেয়ে যান অধ্যক্ষ।

গত বছরের ৯ আগস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালের সেমিনারকক্ষে ওই নারী চিকিৎসকের মরদেহ পাওয়া যায়। তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এই খুনের ঘটনায় পরদিন ১০ আগস্ট পুলিশ সঞ্জয় রায় নামের একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে। ১৩ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ২ সেপ্টেম্বর আর্থিক দুর্নীতি ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দ্বীপ রায় ও টালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ মণ্ডল।

আজ সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতের রায় ঘোষণার আগে সিবিআইর আইনজীবী পার্থ সারথী দত্ত বলেন, ‘দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হলে আমরা বুঝব, এই হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার হয়েছে। তবে সিবিআই এই মামলার নথিপত্র লোপাটের তদন্ত চালিয়ে যাবে।’

দোষী সাব্যস্ত আসামি সঞ্জয় রায়ের আইনজীবী সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ সাজা হলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’

ইতিমধ্যে এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার পুনঃ তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নিহত ওই নারী চিকিৎসকের বাবা–মা। আগামী ১৭ মার্চ সেই আবেদনের শুনানি হবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে।

ওই চিকিৎসকের বাবা–মা বলছেন, ‘যুদ্ধের শেষ পরিণতি আমরা দেখে ছাড়ব। শুধু একজন এই ঘটনা ঘটাতে পারে না। সিবিআইকে অন্য অপরাধীদেরও খুঁজে বের করতে হবে।’

শেয়ার করুন